তিনি নিজে বিশ্ববিখ্যাত জাদুকর। তাঁর বড় কন্যাও খ্যাতনামা জাদুকর। পরের দুই কন্যা টলিউডের নামকরা অভিনেত্রী। কিন্তু মেয়েদের বিয়ের জন্য জাদুসম্রাট বিজ্ঞাপন দিলেন সংবাদপত্রে। একজন বাবা হিসেবে তাঁর মেয়েদের সু-পাত্রস্থ করার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়াটা বড় কোনও বিষয় নয়। কিন্তু বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু যখন একটু আলাদা হয়, তখন তা বর্তমান সময়ের নিরীখে অন্য মাত্রা পায়। আমরা কথা বলছি জাদুসম্রাট পিসি সরকার জুনিয়রকে নিয়ে। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী জয়শ্রী সরকার একটি সংবাদপত্রে তাঁদের তিন মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজে বের করার জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। ছকভাঙা সেই বিজ্ঞাপনই এখন সোশ্যাল মিডিয়ার চর্চার বিষয়।
পিসি সরকার জুনিয়রের তিন কন্যা, তিনজনই সুপ্রতিষ্ঠিত। এই তিনজনের জন্য একই সঙ্গে পাত্রের খোঁজ শুরু করলেন সরকার দম্পতি। যা নিয়ে কৌতুহল জন্মেছে সমাজ মাধ্যমে। কারণ, আজকাল সুপ্রতিষ্ঠিত মেয়েদের ‘দেখেশুনে’ বিয়ে দেওয়ার চল অনেকটাই কমেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, সমাজে বা কর্মক্ষেত্রে যারা প্রতিষ্ঠিত, তাঁরা নিজেরাই নিজেদের জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী খুঁজে নেন। কিন্তু পিসি সরকারের তিন মেয়ে সে পথে হাঁটেননি। তবে কি জাদুসম্রাটের জাদুর ছোঁয়ায় পাত্রই ভ্যানিস হয়ে গেল? আজ্ঞে না মশাই, ভ্যানিস নয়, তিন মেয়েই বাবা-মায়ের ঠিক করে দেওয়া পাত্রের সঙ্গে সাতপাঁকে বাঁধা পড়তে চান। এ বিষয়ে, জাদুকর বলছেন, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় বা মাথুরী দীক্ষিতের মতো স্বনামধন্য অভিনেত্রীদেরও দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছে। আমার মেয়েদের ক্ষেত্রেও তা হলে ক্ষতি কি।
আসলে বিয়ে তো আর জাদু বা ইন্দ্রজাল নয়। যে হাতের কারসাজিতে পাত্র হাজির করে দেওয়া সম্ভব। আসলে অনেকটা পুরাকালের স্বয়ংবর সভার মতো বিষয় নতুন মোড়কে হাজির করতে চান জাদুসম্রাট। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘জাদুশিল্পী পিসি সরকার জুনিয়র এবং জয়শ্রী সরকারের কন্যাদের জন্য জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ৩৮-৪৫ উপযুক্ত, সুদর্শন, দীর্ঘাঙ্গ, সুপ্রতিষ্ঠিত পাত্র চাই’’। আসলে এই বিজ্ঞাপন ঘিরেই যত ইন্দ্রজাল রচনা করেছেন জাদুসম্রাট। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তিনি পাত্র চান। অর্থাৎ তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনও ছুঁৎমার্গ নেই। অনেকটা পুজোর বাজার করার সময় অনেকগুলি দোকান ঘুরে পছন্দের পোশাক বাছাই করা। বলা ভালো আধুনিক স্বয়ংবর সভা। পাত্র চাই বিজ্ঞাপন দেখে সমাজে প্রতিষ্ঠিত বহু পাত্রের পরিবার যোগাযোগ করবেন। জাদুশিল্পীর পরিবার তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে, কন্যাদের যাকে পছন্দ হবে, তাঁর সঙ্গেই ছাদনাতলায় যাবেন।
পি সি সরকার জুনিয়রের বড় মেয়ে মানেকা সরকার। পেশায় তিনি জাদুকর। বাবার মতো তিনিও এখন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শহরে জাদুর শো করেন। মেজ মেয়ে মৌবনী এবং ছোট মেয়ে মুমতাজ টলিউডের অভিনেত্রী। মৌবনীর বেশ কয়েকটি চলচিত্রে অভিনয় করেছেন। ছোট মেয়ে মুমতাজ ভূতের ভবিষ্যৎ, আশ্চর্য প্রদীপের মতো জনপ্রিয় সিনেমায় দেখা গিয়েছে। তিন বোনই একযোগে বলেছেন, ‘‘বাবা-মা যদি আপনার ভবিষ্যতের দায়িত্ব নেন, তার থেকে ভাল আর কী হতে পারে’’। কিন্তু কেন এত হইচই? আসলে যে কোনও বাবা-মা বা তিন কন্যার পিতা আর তারকা জাদুকর তো এক নন। তাঁদের তিন কন্যাও তারকা। ফলে তাঁরা যদি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে পাত্রের খোঁজ করেন, সেটাই আশ্চর্যের। এ যেন বাস্তবকেই আস্বীকার করা এক অনন্য ম্যাজিক।
Discussion about this post