গত বছর জুলাই থেকে চরম অস্থিরতা অব্যাহত পদ্মাপাড়ে। এরপর ছাত্র জনতার অভ্যত্থানে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগ করেন। সেই সময় থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তর্দেশীয় ট্রেন চলাচল থেকে বন্ধ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক চেষ্টার পরও ভারত সরকার ট্রেন চালাতে রাজি হয়নি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের অসংখ্য চিঠিরও জবাব দেয়নি ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ড। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতিনিধিরা তিন দিনের সফরে ভারতে রওনা হয়েছেন।
সোমবার ২০ জানুয়ারি থেকে বুধবার পর্যন্ত এই সফরে পাঁচটি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেখানে প্রধান বিষয়ই হবে আন্তর্দেশীয় ট্রেন চলাচল পুনরুদ্ধার। এছাড়াও, বিএলএফআই প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়েও আলোচনা হবে, যা ভারতের অর্থায়নে চলছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ভারতের নয়াদিল্লিতে আন্ত-সারকারি রেলওয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বৈঠকের এজেন্ডাগুলো ভারত দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে। এতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল সম্পর্কিত সমস্যা, মালবাহী ট্রেন চলাচল, রেল সংযোগ এবং চলমান প্রকল্প সম্পর্কে আলোচনা হবে।
এছাড়া, বন্ধ থাকা যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল পুনরায় চালু করার পাশাপাশি বন্ধন এক্সপ্রেসের জন্য ‘এন্ড টু এন্ড ইমিগ্রেশন’ নিয়ে আলোচনা হবে। দুই দেশের মধ্যে মালবাহী ট্রেনের আদান-প্রদান বাড়ানো, দর্শনা-গেদে হয়ে মালবাহী ট্রেনের সময় বাড়ানো এবং বেনাপোল-পেট্রাপোল রুটে সার্বক্ষণিক ট্রেন চলাচলের সুযোগ তৈরি করা নিয়েও আলোচনা হবে।
বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মহম্মদ জিয়াউল হক। এছাড়া প্রতিনিধিদলে থাকছেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মহম্মদ নাজমুল ইসলাম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদ মাহবুব চৌধুরী, কমলাপুরের কাস্টম হাউসের ওমর মবিন এবং রেলওয়ের পরিচালক ট্রাফিক মহম্মদ মিজানুর রহমান। সফরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশে আটটি ইন্টারচেঞ্জ রয়েছে, এর মধ্যে পাঁচটি সচল। বর্তমানে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলে ভারত নিরাপত্তার কারণে সম্মতি দিচ্ছে না, তবে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
গত ১৭ জুলাই রাতে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেনটি পরদিন রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ছেড়ে যায়নি। পরে ট্রেনটি ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে আটকে যায়। আর ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনসহ ঢাকা-কলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা-কলকাতা রুটে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করত।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মহম্মদ আফজাল হোসেন বলেছেন, “এটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। আলোচনা সফল হবে কিনা তা বলা কঠিন, তবে আমরা আমাদের স্বার্থের কথা তুলে ধরব।”
Discussion about this post