বাংলাদেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান প্রয়াত জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানের জামাই হলেন বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি আবার বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তখা আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট আত্মীয়। ওয়াকার-উজ-জামানের স্ত্রী বেগম সারাহনাজ কমলিকা হলেন শেখ হাসিনার খুড়তুতো বোন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যথেষ্ট অভিজাত পরিবারের সন্তান ওয়াকার-উজ-জামান। কিন্তু বাংলাদেশের সেনাপ্রধান হিসেবে কতটা যোগ্য এই প্রশ্নও উঠেছে বাংলাদেশে। কেন এই ধরণের প্রশ্ন উঠছে সেটার যথেষ্ট কারণ আছে বলেই মনে করছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল।
বাংলাদেশের একটা অংশ মনে করেন বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান একজন ভীতু ও নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। যিনি ১ লক্ষ ৬০ হাজার সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁকে যতটা ডাকাবুকো হতে হয়, ততটা তিনি নন। ফলে তিনি হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশকে যেমন সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন, তেমনই সেনাবাহিনীকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এই প্রসঙ্গে গত বছরের ৫ আগস্টের পরপর সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের করা এক আশ্বাসবাণী মনে করিয়ে দেওয়া যাক। তিনি বলেছিলেন, আপনাদের আমি কথা দিচ্ছি, এখনই আশাহত হবেন না। আপনাদের যত দাবি আছে তা আমরা পুরণ করব এবং দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবো।
সেনাপ্রধান সাত মাস আগে যা কথা দিয়েছিলেন তা কি পুরণ করতে পেরেছেন? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে ঠিকই কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করার সাহস দেখাতে পারেননি ওয়াকার-উজ-জামান। সেনাবাহিনীর হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলেও আদতে দেখা গেল বাংলাদেশে শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দেশ একটা অরাজক অবস্থায় পৌঁছে গেছে। প্রকাশ্য রাস্তায় মব জাস্টিসের নামে হত্যা, ছিনতাই, গণধোলাই, নারী ও শিশু নির্যাতন বাড়তে থাকলো। গোটা বিশ্বেই বাংলাদেশের নাম বদনাম হতে শুরু করল। বাংলাদেশে ইসলামিক কট্টরপন্থীদের বাড়বাড়ন্ত শুরু হল। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেনা সদর দফতরেই বসে বসে সব দেখলেন। ওই যে তিনি একজন ভীতু প্রকৃতির মানুষ। তিনি ভেবেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস এসে দুই-তিন মাসের মধ্যেই নির্বাচন করিয়ে একটা রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে যাবেন। কিন্তু আদতে তা হয়নি। আর সেনাপ্রধানও তা আঁচ করতে পারেননি। তবে তিনি বাংলাদেশি উপদেষ্টা এবং ছাত্র নেতাদের এই ভারত বিদ্বেষ মেনে নিতে পারেননি। কারণ তিনি অনেকটাই ভারতপন্থী। ফলে তিনি নিজের বিরুদ্ধেই যখন একটা ষড়যন্ত্রের আঁচ পেলেন, তখন তাঁর টনক নড়ল। সাতমাস পর ইউনূস বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি প্রকাশ্য এক অনুষ্ঠানে বলে দিলেন, এনাফ এনাফ! এবার সাবধান হয়ে যান।
বললেন ঠিকই কিন্তু সেভাবে কিছু করে দেখালেন কোথায়? যদিও আমরা দেখলাম, গত ৭ মার্চ হিজবুত তেহরীর মার্চ ফর খিলাফত ব্যানারের বিশাল মিছিলকে তিনি ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করালেন। তাঁর ফোঁস করে ওঠার পর বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কিছুটা অ্যাকশন মোডে এসেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী ধরপাকড় শুরু করেছে। আর তিনি ভারতের সহযোগীতা এবং সাহায্যে একটা সেনাঅভ্যুত্থান ঠেকাতে পেরেছেন। নিজের গদি এবং প্রাণ বাঁচাতে পেরেছেন। কিন্তু ওয়াকার-উজ-জামান এখনও সেনাপ্রধান হিসেবে গত ৫ আগস্ট যে দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, সেটা এখনও পালন করতে পারেননি। ফলে তিনি কিভাবে সেনাপ্রধান হলেন, সেটা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যায়।
Discussion about this post