২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর। সেই দিনের কথা নিশ্চই আপনাদের স্মরণে রয়েছে। ওই দিন রাত আটটায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে আচমকাই ঘোষণা করেছিলেন ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করা হচ্ছে। রাতারাতি সেই খবরে মাথায় হাত পড়েছিল ভারতবাসীর। এরপর কেটে গিয়েছে আটটি বছর। যার ক্ষত আজও সারেনি অনেক ভারতবাসীর। এবার শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করতে পারে। যা নিয়ে উত্তাল ভারতের পড়শি দেশ। আদৌ কি এই খবরের সত্যতা রয়েছে, এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
চলতি বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণ অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি ভারতে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে এই সময়ের মধ্যে চলছে পরিবর্তনের ঝড়। শেখ হাসিনার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের যাবতীয় চিহ্ন মুছে ফেলতে বধ্যপরিকর বাংলাদেশী জনগণ। শেখ হাসিনার পরিবারের কোনও চিহ্নই রাখতে নারাজ তাঁরা। নির্বিচারে ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সমস্ত মূর্তি এবং ম্যুরাল। সরকারি দফতর থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর কন্যার ছবি। সরকারি সম্পত্তি থেকে মুজিবরের নামের ফলক মুছে ফেলা হয়েছে। এখন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রয়ে গিয়েছে শুধু সে দেশের টাকায়। সম্প্রতি গোটা বাংলাদেশেই রটে গিয়েছে, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন তদারকি সরকার বাংলাদেশের ব্যাঙ্কনোট বদলে দিতে পারেন। সেই মতো ১০০০ টাকার নোট বাতিলের গুজবও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন তদারকি সরকার। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান করে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপদেষ্টা করা হয়েছে। যেমন বাংলাদেশের অর্থ এবং বাণিজ্য মন্ত্রকের উপদেষ্টা হয়েছেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশে ১০০০ টাকার নোট বাতিল প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে এখনই যে নোট বাতিল হচ্ছে না সেটা স্পষ্ট করেছেন তিনি। মঙ্গলবার বাংলাদেশের অর্থ এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা তাঁর সচিবালয়ে চিন এবং কানাডার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠক শেষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে ১০০০ টাকার নোট বাতিল নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি এই বিষয়ে বলেন, হ্যাঁ বা না এখন কিছুই বলা ঠিক হবে না। এটা খাক। এতে কোনও অসুবিধা তো হচ্ছে না বলেও জানান সালেহ উদ্দিন আহমেদ। গুজব নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁর কৌশলি মন্তব্য, “আমার দিক থেকে কিছু বলিনি। সুতরাং গুজব কিনা বলতে পারবো না। এটা বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের ব্যাপার”। পরে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেয়, ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ার যে খবর ছড়িয়েছে, সেটা গুজব। এমন কোনও পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই। তবে বিশেষজ্ঞমহল মনে করছেন, আগামী সময়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি দেওয়া নোট বাতিল করে নতুন মুদ্রা আনতে পারে তদারকি সরকার।
Discussion about this post