ধুঁকতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা বিএসএনএল এবার নতুন উদ্যোমে ময়দানে নামছে। রতন টাটার এক সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে গোটা দেশে শক্তিশালী ৪জি নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে উদ্যোগী হল বিএসএনএল। জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি ৪জি টাওয়ার বসানো এবং চারটি ডেটা সেন্টার তৈরি করতে চলেছে দুই সংস্থা। তাই এবার জিও-এয়ারটেল চাপে পড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞমহল।
জিও, এয়ারটেল বা ভোডাফোন-আইডিয়া ভারতের টেলিকম ব্যবসায় এতদিন একচেটিয়া আধিপত্য রেখে আসছে। ৩জি, ৪জি পার করে এই সংস্থাগুলি দেশজুড়ে ইতিমধ্যেই ৫জি নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে। ফলে মোবাইলে হাইস্পিড ইন্টারনেট পাওয়া এখন খুবই সহজ। সেই দিক থেকে রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল পড়ে রয়েছে সেই ৩জি যুগে। ফলে দিনে দিনে অবনতি হচ্ছিল বিএসএনএলের গ্রাহক সংখ্যায়। তবে এবার বিএসএনএলের টার্ন। দিন কয়েক আগেই যেখানে জিও, এয়ারটেল, ভোডাফোন আইডিয়া তাঁদের রিচার্জের খরচ বাড়িয়েছে। সেখানেই সস্তায় ৪জি পরিষেবা এনে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল। আর এর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল প্রখ্যাত শিল্পপতি রতন টাটার সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি।
দুর্দান্ত অফার! জিও, এয়ারটেল ছেড়ে BSNL-এ যাওয়ার হিড়িক
ইংরেজি সংবাদপত্র ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, সম্প্রতি বিএসএনএল এবং টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার একটি চুক্তি করেছে। এই চুক্তি অনুযায়ী টাটার হাত ধরে বিএসএনএল দেশজুড়ে শক্তিশালী ৪জি নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে চলেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ হাজার ৪জি টাওয়ার বসানোর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। ধাপে ধাপে দেশজুড়ে প্রায় এক লক্ষ ৪জি টাওয়ার বসাবে বিএসএনএল। এছাড়া দেশে চারটি বড় মাপের ডেটা সেন্টার স্থাপন করতে চায় টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস।এই ডেটা সেন্টারগুলির মাধ্যমেই বিএসএনএল গোটা দেশে ৪জি নেটওয়ার্ক মসৃণভাবে পরিচালনা করবে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এই পরিকাঠামো এমনভাবে তৈরি হবে, যাতে অদূর ভবিষ্যতে ৫জি নেটওয়ার্কও আনা যায় মসণভাবে। বিএসএনএল সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের মধ্যেই ১০ হাজার টাওয়ার প্রতিস্থাপন করতে চলেছে তাঁরা।
জানা যাচ্ছে, মূলত গ্রামীণ এলাকায় ৪জি পরিষেবা প্রদান করাই মূল লক্ষ্য এই দুই সংস্থার। যেখানে বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলির দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা বড় এবং ছোট শহরগুলিতেই বেশি কাজ করে। সেখানে প্রত্যন্ত গ্রামগুলি এই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত তাই প্রাথমিকভাবে গ্রামে গ্রামে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যেই কাজ করছে বিএসএনএল এবং টাটা গ্রুপ। সম্প্রতি টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস বা টিসিএস স্টক এক্সচেঞ্জগুলিকে জানিয়েছে, তাঁরা দেশজুড়ে শক্তিশালী ৪জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের পরিকাঠামো তৈরির জন্য বিএসএনএলের থেকে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার বরাত পেয়েছে। এরমধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা এবং প্রতিস্থাপনের খরচ এবং বাকি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।
এই চুক্তি মোতাবেক, টিসিএসের নেতত্বাধীন কনসোর্টিয়াম বিএসএনএলের ৪জি নেটওয়ার্কের জন্য পরিকল্পনা থেকে শুরু করে যন্ত্রাংশ সরবরাহ, প্রতিস্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় দক্ষ কর্মী দিয়েও সাহায্য করবে। এই কনসোর্টিয়ামে টিসিএস, বিএসএনএল ছাড়াও রয়েছে, বেঙ্গালুরু ভিত্তিক দেশীয় টেলিকম সরঞ্জাম সংস্থা তেজস নেটওয়ার্ক এবং রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা সি-ডট। তাই এবার দেশের প্রতিটি কোনায় সস্তায় ৪জি ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। আর অন্যদিকে জিও, এয়ারটেল ও ভোডাফোন আইডিয়ার মতো বেসরকারি টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির কপালে বাড়ছে চিন্তার ভাঁজ।
Discussion about this post