এই গরমে টক দই খান না এমন মানুষ খুব কমই আছে। শুধু গরম নয় সারাবছর আমরা টক দইকে আমাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে থাকি। আর এর অনেক কারণ ও আছে , টক দই যেমন আমাদের শরীর কে ঠাণ্ডা রাখে ঠিক তেমনি এরমধ্যে আছে হাজারো পুষ্টিগুণ। বিদেশে তো রীতিমতো টক দইকে প্রতিদিনের ডেজার্ট হিসেবে খাওয়া হয়। কিন্তু, কেবল কি স্বাদের জন্যই টক দইয়ের এমন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা? উত্তর হলো- না। টক দই আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। বাঙালি না জেনেও প্রতিদিনের রান্নায় টক দই ব্যবহার করেন। যেমন- রোস্ট, বিরিয়ানি, কারি, দই বড়া, ইত্যাদি রান্নায় টক দই আমরা হামেশাই ব্যবহার করি।কিন্তু সঠিক উপায়ে টক দই না খেতে পারলে এর বেশ কিছু অপকারিতা ও থাকে । আজ এর উপকারিতা এবং অপকারিতা উভয় জানবো ।
প্রথমে এর পুষ্টি গুণ সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক
গৃহপালিত পশুর দুধ থেকে তৈরি এই খাবারটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। দুধ থেকে ফার্মান্টেশন পক্রিয়ায় দই তৈরি হয় তা আমরা সবাই জানি। ফার্মান্টেশন পদ্ধতি নিয়ে একটি গল্প কথা আছে, জানা যায়, যাযাবর জাতি প্রথম এই পক্রিয়ায় সূত্রপাত ঘটিয়েছিল।তারা এখানে ওখানে যাযাবর জীবন যাপন করতো, তখন পশুর চামড়ার থলেতে দুধ বহন করতো তারা। আর দুধ থেকে দইয়ের পক্রিয়ায় ফার্মান্টেশনের জন্য ব্যাক্টেরিয়া একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে পশুর চামড়া কে ব্যাকটেরিয়ার আদর্শ রূপ বলা চলে, তাই সেই পশুর চামড়া তৈরি থলেতেই দুধ দইয়ে পরিণত হয়ে থাকতো।
টক দইয়ে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম,পটাসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন (ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি, ইত্যাদি), ফসফরাস, ইত্যাদি থাকে। আর এই দই প্রণালী পক্রিয়া তে মিষ্টি দইয়ের মতন চিনি দেওয়া হয়না বলে, এটি দেহের সুগারের লেভেল ও বাড়ায় না ফলে খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাবার টকদই।
টক দইয়ের উপকারিতা
১.নিয়মিত টক দই খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কারণ টক দইয়ে উপস্থিত থাকে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী ব্যাক্টেরিয়া। এইসব ভালো ব্যাক্টেরিয়া গুলি আমাদের শরীরের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়াকে মেরে ফেলে। ফলে, শরীর সুস্থ থাকে।
২.টক দই তে প্রচুর পরিমাণ ক্যালশিয়াম থাকে যা আমাদের হাড়,দাঁত, পেশী ইত্যাদি মজবুত ও সুস্থ রাখে ।যারা দাঁতের সমস্যায় ভোগেন তারা নিয়মিত টক দই খাওয়া অভ্যাস করতে পারেন।
৩.নিয়মিত টক দই খেলে আমাদের শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমতে পারে না। ফলে, শরীর ভিতর থেকে সুস্থ থাকে ।
৪.টক দইয়ে ল্যাকটিক আসিড বিদ্যমান, তাই টক দই খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
৫.ওজন কমাতে টক দই এর জুড়ি মেলা ভার । টক দই কেবল ওজন কমায় তা নয়। যারা ওজন বৃদ্ধি করতে চায় তাদের জন্যও বেশ কার্যকর। কেবল খাওয়ার পদ্ধতি আলাদা
৬.টক দই উচ্চ রক্তচাপ কমায়।টকতে যে ক্যালশিয়াম থাকে তা চুলের জন্য খুবই উপকারী ।
৭.তাছাড়াও টক দই নিয়মিত খেলে তা কোলন ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলসহ নানা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
টক দইয়ের অপকারিতা
টক দইয়ের উপকারিতা ছাড়াও অনেক অপকারিতা ও আছে। যেমন যাদের ল্যাকটোজ গ্রহণের সমস্যা রয়েছে তারা খেলে , শরীরে না না রকম সমস্যা দেখা দেয়। কখনো বেশি পরিমাণ টকদই খাওয়া উচিত নয়। প্রতিদিন ৩০০ গ্রামের বেশি টক দই খাওয়া ঠিক নয়।
অন্যদিকে যদি টকদই আপনি বেশিক্ষণ ফ্রিজে রেখে খান তবে সেই ঠাণ্ডা টক দই খাওয়ার ফলে আপনার ঠাণ্ডা লেগে শরীর অসুস্থ হওয়ার ভয় থাকে। আবার অনেকে টক দইয়ে চিনি মিশিয়ে খান এর ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।তাই যেকোনো জিনিস খেলে সেটি নিয়ম মেনে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে তবেই খান টা নাহলে তার উপকারিতার সাথে সাথে অপকারিতার কবলেও পড়তে হতে পারে।
Discussion about this post