কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত শুরু করেছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। যা আপাতত স্থগিত হলেও, পুরোপুরি বন্ধ হয়নি বলেই জানিয়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। এবার পাকিস্তানের ‘সব মরশুমের বন্ধু’ চিনে গিয়েই পাকিস্তানকে ধুঁয়ে দিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সেই সঙ্গে বড় বার্তা দিলেন চিনকেও। দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাবশালী আঞ্চলিক গোষ্ঠী, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা বা এসসিও-র সদস্য দেশগুলির শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে অজিত ডোভাল চিন সফর করছেন। সোমবার বেইজিংয়ে চিনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সাথে বৈঠকও করেন ভারতের জেমস বন্ড অজিত ডোভাল। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বলছে, পূর্ব লাদাখ সীমান্ত অচলাবস্থার পর তীব্র চাপের মুখে পড়া সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের জন্য উভয় পক্ষের প্রচেষ্টার মধ্যে অজিত ডোভাল এবং ওয়াং ইয়ে ভারত-চিন সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করেছেন। কিন্তু কূটনৈতিক মহল মনে করছেন, মূল অনুষ্ঠানের বাইরে অর্থাৎ সাইডলাইনের এই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় উঠেছিল অন্য একটি প্রসঙ্গ। সেটা হল বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক বোঝাপড়া এবং কক্সবাজারে প্রস্তাবিত রাখাইন মানবিক করিডোর দেওয়া নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের সিদ্ধান্ত। ফলে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
অপরদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজ এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও তড়িঘড়ি চিনে যাচ্ছেন। তিনি ২৭ জুন চিন সফর করবেন, ঠিক যেদিন কিংডাওতে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার বৈঠক শেষ হবে। অর্থাৎ, অজিত ডোভাল চিন থেকে ফিরলে সেখানে পৌঁছবেন খলিলুর রহমান। যিনি এখন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মূল সহযোগী এবং রাখাইন করিডোরের মূল হোতা। ওই সংবাদমাধ্যম আরও দাবি করেছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান চলতি মাসের শেষ দিকে তাঁর প্রস্তাবিত চিন সফর স্থগিত করেছেন বা তাঁর চিন সফর নাকচ করা হয়েছে। সেনাপ্রধানের পরিবর্তে বেজিং যাবেন খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মুখ্য সচিব মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন মিয়া। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, যিনি সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফরে গিয়েছিলেন। তিনি ২৭ থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত চিনে থাকবেন এবং ঢাকা-বেজিং সহযোগিতার বিষয়ে “পরামর্শ” করবেন বলে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ২৫ জুন কিংডাওতে এসসিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দেবেন। যেখানে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও উপস্থিত থাকবেন। তবে অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের কোনও আলাদা বৈঠকের সম্ভাবনা খুব কম।
মনে করা হচ্ছে, চিন সফরকালে আলাদা করে অজিত ডোভালের সঙ্গে চিনের বিদেশমন্ত্রীর বৈঠকটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি সামরিক বেস তৈরি করতে উদ্যোগী। যার জন্য মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমে রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাবে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে একটি মানবিক করিডোর দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। যার প্রবল বিরোধিতা করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীও সেই ইঙ্গিতই দিয়ে রাখে। ফলে সাময়িক পিছু হটতে হয় ইউনূস সরকারকে। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মার্কিন নাগরিক খলিলুর “রজার” রহমান মুহাম্মদ ইউনূস এবং মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করছেন। তাই সেনাপ্রধানকে চাপে রাখতেই খলিলুরকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করা হয়েছে। এবং আরও একজন অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তানপন্থী সামরিক কর্তাকে সহকারি নিরাপত্তা উপদেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্য এখন পরিস্কার। কারণ, ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, ঘনঘন বাংলাদেশে যাওয়া আসা করছেন মার্কিন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা। শীঘ্রই বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দুটি সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হতে পারে বলেও জানা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চিনকে পাশে টানতে ময়দানে নেমেছেন অজিত ডোভাল। কূটনৈতিক মহলের মতে, রাখাইন করিডোর হলেও তা চিনের স্বার্থ বিরোধী, কক্সবাজারে মার্কিন ঘাঁটি হলেও চিনের স্বার্থ বিরোধী হবে। এটা একদিকে রাশিয়া ও ভারতের পক্ষেও খুব একটা সুখকর হবে না। তাই রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ভারত ও চিন একযোগে বাংলাদেশ ইস্যুতে কাজ করতে একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। যার সূচনা করতেই চিনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। যিনি ভারতের ড্যামেজ কন্ট্রোল মাস্টার বলেই পরিচিত। ফলে যে চিনকে সামনে রেখে মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকবার ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়েই হুমকি দিয়েছিলেন, এবার সেই চিনকেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে মরিয়া ভারত। ময়দানে নেমেছেন অজিত ডোভাল, তাই চিন্তায় মুহাম্মদ ইউনূস। এখন দেখার কূটনৈতিক বুদ্ধিতে কে কাকে মাত দেয়।
এক উদ্বেগজনক সন্ধিক্ষণের মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ! ইউনূসের ফাঁদে পড়ে কী হাঁসফাঁস করছেন জেনারেল ওয়াকার?
বাংলাদেশ আজ এক উদ্বেগজনক সন্ধিক্ষণের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে মুহাম্মদ ইউনূসের দুর্বল কূটনীতি, শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা ও বহিরাগত প্রভাব যেমন চোখে...
Read more
Discussion about this post