ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে পাকিস্তানের গুপ্তচর হিসেবে গ্রেফতার করার পর থেকে দেশজুড়ে হইচই শুরু হয়েছে। সুন্দরী ও লাস্যময়ী তরুণীর কীর্তিকলাপ যত সামনে আসছে, ততই তাজ্জব হচ্ছেন নেটদূনিয়ার বাসিন্দারা। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, চিন, বাংলাদেশে ঘুরে তিনি কেন কলকাতা ও ব্যারাকপুরে এসেছিলেন, কি তথ্য ফাঁস করেছেন, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
সুন্দরী ও লাস্যময়ী তরুণী জ্যোতি মালহোত্রা, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে যথেষ্টই জনপ্রিয়। ইউটিউব, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার। উঠতি ইউটিউবারদের কাছে তিনি রীতিমতো রোল মডেল। এ হেন রোল মডেল যে দেশের খেয়ে দেশেরই ক্ষতি করতে তলে তলে কাজ করছিলেন তা ঘ্রুণাক্ষরেও টের পাননি ভারতের তাবড় গোয়েন্দা এজেন্সিগুলি। হরিয়ানার বাসিন্দা জ্যোতি পাকিস্তানের গুপ্তচর হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছিলেন বলে সাম্প্রতিক তদন্তে উঠে এসেছে। তাঁকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে হরিয়ানা পুলিশ। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ এবং ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা আইবি। আর এই তদন্ত যতই এগোচ্ছে, ততই পিঁয়াজের খোসার মতো চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। এমনকি উঠে এসেছে বঙ্গ যোগও।
ঘরের মেয়ে হয়ে লড়াইয়ে নেমেছিলেন ঘরের বিরুদ্ধেই, অভিযোগ এমনই। পহেলগাঁও হামলার পর জঙ্গিদের খোঁজে নেমে এনআইএ গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করছিলেন তাঁদের হ্যান্ডলার এবং স্থানীয় চরদের বিষয়ে। তাতেই উঠে ভারতের ভিতরেই ঘাপটি মেরে থাকা একাধিক চরের। যারা ভারতীয় নাগরিক, কিন্তু কাজ করছিল পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হয়ে। এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার ১০ জনের বেশি পাক চর। যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম জ্যোতি মালহোত্রা। যিনি সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ঘাঁটলেই দেখা যাবে, পাকিস্তানে একাধিকবার গিয়েছিলেন তিনি। এমনকি চিন ও বাংলাদেশেও গিয়েছিলেন। তবে পাক গুপ্তচর হিসেবে তাঁর নাম উঠে আসার পর দেশজুড়ে হইচই শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, তাঁকে জেরা করছেন দেশের বাঘা বাঘা গোয়েন্দারা। কিন্তু গোল গোল জবাব দিয়ে তাঁদেরও ঘোল খাইয়ে ছাড়ছেন হরিয়ানার সুন্দরী। সম্প্রতি জ্যোতি মালহোত্রার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পহেলগাঁও হামলার পর দিল্লিতে পাক হাইকমিশনে যে ব্যক্তি কেক নিয়ে গিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে কথা বলছেন জ্যোতি। তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, পাক হাই কমিশনের আধিকারিক এহসান দার ওরফে দানিশের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। এই আধিকারিককেই গত ১৩ মে দু’দেশের সামরিক অস্থিরতার সময়ে বহিষ্কার করেছিল ভারত। যদিও জানা যাচ্ছে, জ্যোতি এই যোগাযোগ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তবে গোয়েন্দাদের হাতে জ্যোতির মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ রয়েছে। জ্যোতির মোবাইল পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, দানিশের সঙ্গে তার কয়েকটি কথোপকথন মুছে দেওয়া হয়েছে। আর এটা থেকেই তদন্তকারীদের ধারণা, ওই কথোপকথনেই রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। তাঁর ফোন এবং ল্যাপটপ ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে মুছে ফেলা চ্যাট উদ্ধার করার জন্য।
ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা একাধিকবার পাকিস্তান গিয়েছিলেন। তিনি একাধিক পাকিস্তানি এজেন্টের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন এবং তাঁদের সংযোগ গোপন রাখার জন্য বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করেছিলেন। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার এনক্রিপ্ট করা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছিলেন জ্যোতি। যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম স্নাপচ্যাট ইত্যাদি। সাধারণ সিম ব্যবহার করে তিনি কথা বলতেন না। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, পাক দূতাবাসের আধিকারিক এহসান দার ওরফে দানিশের সাথে জ্যোতিকে পরিচয় করিয়ে দেন হরিয়ানা শিখ গুরুদ্বার ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মচারী হরকিরত সিং। সেই সূত্র ধরেই জ্যোতি দুবার পাকিস্তানের ভিসা পেয়েছিলেন। তদন্তকারীরা যেমন জানতে পেরেছেন ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রার সঙ্গে একাধিক পাক এজেন্টের যোগাযোগ ছিল, তেমনই তাঁর মাধ্যমে পাকিস্তান ভারতীয় এজেন্টদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিত। গোয়েন্দারা আরও জানতে পেরেছেন, পাক-আফগান সীমান্তেও ঘুরে এসেছেন ওই ইউটিউবার। যে এলাকা ‘জঙ্গিদের ডেরা’ বলে দাবি করা হয়। ওই অঞ্চলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেই এলাকায় কিভাবে পৌঁছে গেলেন জ্যোতি, সেটাই জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
অপরদিকে পাক গুপ্তচর সন্দেহে ধৃত জ্যোতি মালহোত্রা কলকাতাতেও এসেছিলেন। এমনকি তিনি ব্যারাকপুরেও এসে ঘুরে গিয়েছেন। বাংলারই আরেক ভ্লগারের সঙ্গে ঘোরাফেরা, ভিডিও করা এবং সময় কাটানোর হাতেগরম প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে জ্যোতির সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে। আদতে আসানসোলের বাসিন্দা সৌমিত ভট্টাচার্যের সঙ্গে জ্যোতি কাশ্মীরের পাশাপাশি কলকাতা ও ব্যারাকপুর সফর করেছেন বলেই দেখা যাচ্ছে একাধিক ভিডিওতে। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মত, হয়ত ঘোরাঘুরি এবং ইউটিউব ভ্লগের সূত্রেই জ্যোতির সঙ্গে আলাপ সৌমিতের। বাংলার ভ্লগার এটাই দাবি করেছেন। তবে কেন ব্যারাকপুর সেটাই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। কারণ ব্যারাকপুরে সেনাছাউনি রয়েছে।
Discussion about this post