কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর ২৪ পরগণা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ জেলার বহু আশঙ্কাজনক রোগীর প্রথম ঠিকানা হয় এই মেডিকেল কলেজ। রেফার রোগে আক্রান্ত জেলার হাসপাতালগুলি সহজেই আর জি কর মেডিকেল কলেজে রেফার করেন সঙ্কটাপন্ন রোগীদের। তাই দিন দিন এই হাসপাতালের গুরুত্বও বেড়েছে। সেই হাসপাতালের ভিতর ধর্ষণ করে খুন করা হল এক চিকিৎসক পড়ুয়াকে। যিনি এমবিবিএস করার পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়াশোনা করছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তুমুল আন্দোলন শুরু করে দেয় আর জি করের জুনিয়র ডাক্তাররা। যা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সাড়া রাজ্যের হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে। কলকাতা পুলিশের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে নজিরবিহীন দ্রুততায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, এত দ্রুত কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার নজির প্রায় নেই বললেই চলে। যা আর জি কর ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় হল। এখন প্রশ্ন হল, সিবিআই তদন্তে কতটা দ্রুত ধরা পড়বে আসল অপরাধীরা?
বিগত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে ভুরিভুরি ঘটনার তদন্ত সিবিআই অথবা ইডির মতো কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির হাতে গিয়েছে। সেই বাম আমলের চিটফান্ড কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে তৃণমূল জমানার একাধিক হাই প্রোফাইল মামলা। যেমন, এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলা, গরু পাচার মামলা, কয়লা পাচার মামলা, রেশন দুর্নীতি মামলা। কিন্তু এই মুহূর্তে সিবিআইয়ের হাতে থাকা এই রাজ্যের মামলার প্রকৃত সংখ্যাটা কত? চলতি বছরের গোড়ায় সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলায় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী প্রশ্ন করেছিলেন, আপনাদের হাতে হয়তো হাজারের ওপর মামলা রয়েছে, আপনারা সেখানে বাড়ি কেন নিচ্ছেন না? সে সময় সিবিআইয়ের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে সিবিআইয়ের হাতে ৫০০-র বেশি মামলা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরি মামলা থেকে শুরু করে, ছোট আঙারিয়া কাণ্ড, বাগটুই কাণ্ড, নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস-সহ অসংখ্য এমন মামলা এখন সিবিআই তদন্তের আওতায় রয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দিল্লি থেকে প্রতিদিন নতুন নতুন কর্মী-অফিসার পাঠাতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে।
যেমন আর জি কর কাণ্ডের তদন্তের জন্য বুধবার সকালেই সিবিআইয়ের ২৫ জনের একটি কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে তদন্তে নেমে পড়ে সিবিআই। একটি দল আর জি কর কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের হাতে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে হেফাজতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করিয়ে সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর, আর জি করের ঘটনার তদন্তের সুবিধার্থে সিবিআই বেশ কয়েকটি দল গঠন করে তদন্ত শুরু করেছে। দিল্লি থেকে আসা সিবিআই আধিকারিকদের মধ্যে একটি দলে রয়েছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বুধবারই আর জি কর হাসপাতালে যেতে পারেন বলে খবর। ঘটনাস্থল সেমিনার হলে তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করতে পারেন। এমনকি আরেকটি দল হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার, পদাধিকারী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যান্য কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। সিবিআইয়ের আরেকটি দল মৃতা মহিলা চিকিৎসকের পরিচিত এবং আত্মীয় পরিজনের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। ইতিমধ্যেই সিবিআই সূত্রে জানা যাচ্ছে, তাঁরা মৃতা চিকিৎসকের মোবাইল পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। সবমিলিয়ে বলা যায়, আর জি কর কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্ত এখন একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে যে পরিমান তৎপরতা তাঁরা দেখাচ্ছে, তাতে দ্রুতই এর সুরাহা করতে পারেন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সিবিআই তদন্ত কি শুধুমাত্র মৃতা চিকিৎসকরের ধর্ষক-খুনিদের খুঁজে বার করেই ক্ষান্ত হবে, নাকি আর জি করে ঘুঘুর বাসাতেও হাত দেবে? অধীর আগ্রহে রয়েছে বঙ্গবাসী।
Discussion about this post