দম ফেলার সময় নেই নির্বাচন কমিশনের, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের। প্রতি নির্বাচনেই দেখা যায় একই ছবি। তবে এই ফাঁকে চলুন একবার ইতিহাসের পথ ধরে চলে যাই দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের দিনগুলোতে। কেমন ছিল স্বাধীন ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচন? কিভাবেই বা তা পরিচালিত হয়েছিল? আসুন একবার চোখ ফেরাই সেই দিনগুলোতে। বিস্তারিত জেনে নেই ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ইতিকথা
২৫ অক্টোবর ১৯৫১ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালের মধ্যে ভারতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর সেই প্রথমবার। ভোটাররা ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৪৮৯ জন সদস্যকে নির্বাচিত করেছিল। রাজ্যের অধিকাংশ আইনসভার নির্বাচনও একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
২৬ নভেম্বর ১৯৪৯-এ গৃহীত সংবিধানের নির্দেশিকা অনুসারে সেই নির্বাচন পরিচালিত হয়েছিল। সেই সময় একটি অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ছিল। ১৯৪৯ সালে একটি নির্বাচন কমিশন তৈরি করা হয়েছিল এবং ১৯৫০ সালের মার্চ মাসে সুকুমার সেনকে প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। এক মাস পরে পার্লামেন্ট জনপ্রতিনিধিত্ব আইন পাস করে। এই আইনেই নির্ধারিত হয় যে কিভাবে সংসদ এবং রাজ্য আইনসভার নির্বাচন পরিচালনা করা হবে।
২৫টি রাজ্যের ৪০১টি নির্বাচনী এলাকায় বরাদ্দ করা হয়েছিল লোকসভার মোট ৪৮৯ টি আসন।প্রথম পাস্ট-দ্য-পোস্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩১৪ টি নির্বাচনী এলা
কায় একজন করে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৮৬টি আসনে দু’জন করে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন -একজন সাধারণ বিভাগ এবং একজন তফসিলি জাতি বা উপজাতি থেকে।
তিনজন নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি নির্বাচনী এলাকা ছিল। বহু-আসন সম্বলিত নির্বাচনী এলাকাগুলো সমাজের অনগ্রসর অংশর জন্য সংরক্ষিত আসন হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল, যদিও পরে ১৯৬০-এর দশকে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। এই সময়ে সংবিধানে ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত দুজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সদস্যেরও বিধান রাখা হয়েছিল।
লোকসভার ৪৮৯টি আসনের জন্য মোট ১,৯২৯জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। প্রতিটি প্রার্থীকে ভোট কেন্দ্রে আলাদা রঙের ব্যালট বাক্স বরাদ্দ করা হয়েছিল, যার উপর প্রার্থীর নাম ও প্রতীক লেখা ছিল।
ভোটার তালিকা টাইপ এবং সংযোজন করার জন্য ছ’ মাসের চুক্তিতে ১৬,৫০০ ক্লার্ক নিয়োগ করা হয়েছিল এবং তালিকাগুলি ছাপানোর জন্য ৩,৮০,০০০ টি কাগজের শিট ব্যবহার করা হয়েছিল।
১৯৫১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৩৬,১০,৮৮,০৯০ জনসংখ্যার মধ্যে মোট ১৭,৩২,১২,৩৪৩ জন ভোটার নিবন্ধিত (জম্মু ও কাশ্মীর ব্যতীত) ছিলেন। ২১ বছরের বেশি বয়সী সমস্ত ভারতীয় নাগরিক ভোট দেওয়ার যোগ্য ছিলেন।
প্রথম নির্বাচন তাতে ছিল আবহাওয়া থেকে শুরু করে আরো নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনটি ৬৮টি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মোট ১,৯৬,০৮৪টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল, যার মধ্যে ২৭,৫৭২ টি বুথ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। বেশিরভাগ ভোট প্রক্রিয়া ১৯৫২ সালের প্রথম দিকে হয়েছিল, কিন্তু হিমাচল প্রদেশে ১৯৫১ সালে ভোট হয় কারণ এর আবহাওয়া সাধারণত ফেব্রুয়ারী এবং মার্চ মাসে খারাপ থাকে। তুষারপাতের ফলে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। বাকি রাজ্যগুলো ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ এ ভোট দেয়, শুধু জম্মু ও কাশ্মীর বাদে, যেখানে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লোকসভা আসনের জন্য কোনও ভোট হয়নি। প্রথম নির্বাচনের প্রথম ভোট হিমাচল প্রদেশের চিনির তহসিলে (জেলা) হয়েছিল।
প্রথম নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (আইএনসি) বিপুলভাবে জয়ী হয়। ৪৫% ভোট পায় এবং ৪৮৯টি আসনের মধ্যে ৩৬৪টি আসনে জয়ী হয়। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোশ্যালিস্ট পার্টি মাত্র ১১% ভোট পায় এবং বারোটি আসনে জয়ী হয়। পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু দেশের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হন।
Discussion about this post