রাজ্যের পঞ্চম দফা নির্বাচন পেরিয়ে যাওয়ার পর এবার ষষ্ঠ দফায় নির্বাচন কমিশনের কাছে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে ঝাড়গ্রাম তথা জঙ্গলমহলের ভোটে। যে জঙ্গলমহল এক সময় মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা বলেই পরিচিত ছিল সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের খাতায় আর হয়তো সেই নামটা নেই কিন্তু রয়ে গিয়েছে সেদিনের রক্তের দাগের ইতিহাস। আর এই ইতিহাস ঘাটতে গিয়েই নির্বাচন কমিশন এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জঙ্গলমহল বা ঝাড়গ্রামের প্রত্যেক বুথে এক কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা করবে। ঝাড়গ্রামের বুথের সংখ্যা ২০১৮ টি, ঝাড়গ্রামের মোট ভোটার ১৭,৭৯,৭৯৪ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮,৯০,০৫১ জন, মহিলা ভোটার ৮,৮৯,৭২৪ জন, ১৮ থেকে ১৯ বছরের ভোটার ৪৮,৮৭১ জন,৮৫ বছরের উর্ধ্বে ভোটার ১২,৭০২ জন, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৯জন, ১০০ বছরের উর্ধ্বে ভোটার ১৪২ জন এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম ভোটারের সংখ্যা ৮৩৬২ জন।
আজ জঙ্গলমহলে আর বারুদের গন্ধ যেমন পাওয়া যায় না ঠিক তেমনি গুলির শব্দও আর পাওয়া যায় না। এখানে ওখানে আর পড়ে থাকে না মানুষের মৃতদেহ। কিন্তু তবুও রক্তের দাগের যে ইতিহাস আজও বয়ে বেড়াচ্ছে এই জঙ্গলমহল সেই কারণেই নির্বাচন কমিশনের কাছে এবার সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝারগ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন।
বুধবার দেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এক জরুরী বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। অন্য সব কেন্দ্রকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ঝারগ্রাম লোকসভা কেন্দ্রকে অনেকটাই বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখল দেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর। কোন রকম ভাবেই আর কোন কিছুতেই খামতি রাখতে চাইছে না নির্বাচন কমিশন। পাঁচ দফা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে নির্বাচন কমিশন ঠিক করেছে বৃহস্পতিবার থেকেই পুরোদমে টহলদারির কাজ করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। নির্বাচনের সময় যারা হিংসার ঘটনা ঘটায় অন্তত অতীতে যাদের বিরুদ্ধে ভুরিভুরি অভিযোগ রয়েছে তাঁদেরকে আর কোনমতেই এলাকায় থাকতে দেওয়া যাবে না।
পাশাপাশি জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে অবিলম্বে তাঁদের গ্রেপ্তার করতে হবে এমনই কড়া নির্দেশ কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশনের। অর্থাৎ একদিকে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনা অন্যদিকে মানুষ যাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের ভোট দিয়ে আবার নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরে আসতে পারেন সেই লক্ষ্যেই কিন্তু এবার নতুন দৌড় শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে এই দৌড় যে কোনো ইঁদুর দৌড় নয় তা কিন্তু স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন এদিনের ভিডিও কনফারেন্সে। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই যে কথা বারবার কমিশন বলে এসেছে তাকে সম্পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে পালন করতে হবে অক্ষরে অক্ষরে এমনটাই কড়া বার্তা এবার কমিশনের রাজ্যের এই ষষ্ঠ দফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।
এক কথায় নির্বাচন কমিশন বুঝিয়ে দিয়েছে কোন বিক্ষিপ্ত ঘটনাও যাতে এবারে না ঘটে সেদিকে কড়া নজরদারি করতে হবে সকলকেই। সুষ্ঠ অবাধ ও শান্তিপূর্ণ এবং রক্তপাতহীন নির্বাচন করাতে এখন বদ্ধপরিকর দেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এখন দেখার বিষয় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিই কি হয় নাকি নির্বাচন কমিশন এবার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে অন্তত জঙ্গলমহল তথা ঝাড়গ্রামের নির্বাচনে।
Discussion about this post