শ্রী শ্রী চণ্ডীর একটি শ্লোকে রয়েছে, “গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম। ময়া ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ।” এই বলে মহিষাসুরকে ভর্ৎসনা করেছিলেন দুর্গা। পন্ডিতেরা বলেন, শ্লোকে বলা এই “মধু” সেই মধু নয়, বরং তা “মদ্য”। সংস্কৃতে ‘মধু’ শব্দের অর্থ আসলে মদ। তাই শাক্ত মতে বহু ক্ষেত্রেই কালীপুজোর এক অন্যতম উপাচার হিসেবে গণ্য হয় মদকে। আবার ভোলামহেশ্বরের পুজোয় মদ, গাঁজা, সিদ্দি উৎসর্গ করার রীতি আছে। সেরকমই ভারতে এমন একটি মন্দির আছে, যেখানে লিটার লিটার মদ, বিশেষ করে হুইস্কি উৎসর্গ করা হয় দেবতাকে। ভক্তরা দলে দলে হুইস্কি নিয়ে আসেন এই মন্দিরে, পুজোর পর প্রসাদ হিসেবেও বিলি করা হয় হুইস্কি। এমনটাই রীতি প্রাচীন এই মন্দিরের।
মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়নী শহরে রয়েছে এমনই এক আশ্চর্য মন্দির রয়েছে। যা ভৈরবনাথ মন্দির নামে খ্যাত। যদিও স্থানীয়রা ওই মন্দিরকে কাল ভৈরব মন্দির বলেই ডাকেন। স্কন্ধপুরাণ অনুসারে মহাদেব শিবের থেকে সৃষ্ট অষ্ট ভৈরবের প্রধান হলেন কাল ভৈরব। কঠোর তন্ত্র মতে এই মন্দিরে পুজো হয়। তাই যুগ যুগ ধরে এখানে তান্ত্রিক, কাপালিক ও অঘোরী সাধুদের ভিড় থাকে উজ্জ্বয়নের কাল ভৈরব মন্দিরে।
কয়েকশো বছর আগে শিপ্রা নদীর তীরে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা ভদ্রসেন। তখন থেকেই কাল ভৈরবের প্রধান প্রসাদ হল মদ। দেশের আর পাঁচটা মন্দিরের থেকে যে উজ্জয়নীর কাল ভৈরব মন্দির একেবারেই আলাদা সেটা ওখানে গেলেই আপনি টের পাবেন। কারণ, ভারতে যে কোনও মন্দিরের সামনে থাকে ফুল-ডালা-প্রসাদের দোকান। কিন্তু কাল ভৈরব মন্দিরের সামনে শুধুই মদের দোকান পাবেন। দেশি মদ থেকে শুরু করে স্কচ, হুইস্কি, রাম, জিন কি নেই এখানে। পকেট বুঝে বিভিন্ন সাইজের, বিভিন্ন দামের মদের বোতল কিনে ভক্তরা পুজো দিতে যান। ফলে প্রতিদিন এই মন্দিরে কয়েকশো লিটার মদ দেবতাকে উৎসর্গ করা হয়। ফলে উজ্জয়নীর কাল ভৈরব মন্দিরের আশেপাশে তাই পুজোর ডালার দোকানের পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর মদের দোকান। এখানে ভক্তদের বিস্বাস, প্লেটে করে প্রসাদ হিসেবে দেওয়া মদ দেবতা কাল ভৈরব আজও শুষে নেন।
তবে শুধু উজ্জয়নীর কাল ভৈরব মন্দির নয়, ভারতে আরও বেশ কয়েকটি ধর্মস্থান আছে যেখানে মূল প্রসাদ হিসেবে মদ দেওয়া হয়। যেমন মুম্বইয়ের শহরতলি চেম্বুরে অবস্থিত বাবা ভৈরণ নাথ মন্দির। ভগবান শিবের অবতার ভৈরণ নাথের কাছে ভক্তরা দেশি বিদেশী মদ দিয়েই পুজো দেন। আবার পঞ্জাবের অমৃতসরে অবস্থিত বাবা রোডার দরবারে গেলেও আপনাকে মদের বোতল নিয়ে যেতে হবে। বহু যুগ ধরে প্রসাদ হিসেবে মদ দেওয়ার রীতি এই মন্দিরে চলে আসছে।
Discussion about this post