করোনা পরবর্তী সময়ে মধ্যবিত্ত সমাজের আয় কমেছে। ফলে অনেক সময় আপাৎকালীন পরিস্থিতিতে ঋণ নিতে হয় মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের। কিন্তু অভিযোগ উঠছিল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাঙ্কগুলি প্রাপ্যর চেয়ে ঋণগ্রহীতাদের থেকে বেশি টাকা সুদ নিচ্ছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে এবার কড়া ব্যবস্থা নিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এবার দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ দিল, এতদিন অতিরিক্ত যে সুদের টাকা গ্রাহকদের নিয়েছে তা অবিলম্বে ফিরিয়ে দিতে হবে।
আরবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ শেষ হওয়া অর্থবর্ষে দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কিং এবং নন ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশনের (এনবিএফসিএস) অনসাইট পরীক্ষার সময় আরবিআইয়ের নজরে এসেছে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলি ঋণ অনুমোদনের তারিখ থেকেই সুদ নিচ্ছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হওয়া উচিৎ যেদিন ঋণের টাকা গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছবে সেদিন থেকে। এই দুই সময়ের মধ্যে সাধারণত ফারাক থাকে ১০ থেকে ১৫ দিন। আরও সোজা করে বললে, কোনও গ্রাহক যদি ব্যাঙ্ক বা এনবিএফসিএস সংস্থা থেকে ঋণ নেয় তবে ঋণ প্রদানকারী সংস্থা এবং গ্রাহকের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তির দিনের বেশ কয়েকদিন পর গ্রাহকের ব্যাঙ্কে ঋণের টাকা ঢোকে। বা চেক দিলেও তা ভাঙাতে কিছুটা সময় লেগে যায়। কিন্তু সংস্থাগুলি সুদ ধার্য করছে প্রথম দিন থেকেই। বা পুরো মাসের সুদ নিয়ে নিচ্ছে সংস্থাগুলি। আবার এমনটাও দেখা গিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলি এক বা একাধিক কিস্তি (ইএমআই) অগ্রীম নিয়ে নিচ্ছে। অথচ সুদ ঋণের পুরো টাকার ওপরই ধার্য করছে। এতে অহেতুক আর্থিক বোঝা চাপছে গ্রাকদের ওপর।
সোমবার এই বিষয়ে কড়া নির্দেশিকা জারি করল আরবিআই। এক সার্কুলার জারি করে আরবিআই দেশের সমস্ত ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসিএস-গুলিকে অবিলম্বে ঋণ বিতরণের পদ্ধতি, সুদের আবেদন এবং অন্যান্য চার্জ সম্পর্কিত পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে হবে। প্রয়োজনে তা বদল করতে হবে। ঋণদাতা সংস্থা সংস্থাগুলিকে কী কী বেনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে আরবিআই স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে গ্রাহকদের অতিরিক্ত সুদ ও অন্যান্য চার্জ ফেরত দিতে হবে।
ঋণগ্রহীতাদের আরেকটা অভিযোগ, অনেক সময় সুদের হার বৃদ্ধি পেলেও ব্যাঙ্কগুলি তাঁদের জানায় না। ফলে ইএমআই-এর ওপর বাড়তি বোঝা তাঁরা আগাম জানতে পারেন না। এক্ষেত্রেও আরবিআই ঋণদাতা সংস্থাগুলিতে নির্দেশ দিয়েছে, সুদের হার সম্পর্কিত সমস্ত আপডেট গ্রাহকদের সময় সময় জানাতে হবে। এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ মেটাতে না পারলেও তা কতদিনের মধ্যে মেটাতে হবে সেটাও স্পষ্টভাবে গ্রাহকদের জানাতে হবে। আরবিআই-এর এই কড়া নির্দেশিকার জেরে অনেকটাই স্বস্তি পাবেন ঋণগ্রহীতারা।
Discussion about this post