পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিন তাদের বিলুপ্তি ঘটবেই। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো কোনো সময় গণবিলুপ্তি ঘটেছে। যাকে ‘মাস এক্সটিঙ্কশন’ বলা হয়ে থাকে। একটি গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল ডাইনোসর প্রজাতি। পৃথিবীর বুকে হেঁটে বেড়ানো এই প্রজাতির বিলুপ্তি নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে বিভিন্ন দেশে। কিন্তু বর্তমান বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওটাতেই শেষ নয়, পৃথিবী আরেকটি অর্থাৎ ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির সময় পার করছে।
আর এর কারণ কোনো গ্রহাণু নয় বরং মানব সভ্যতা নিজেই। পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংসের মাধ্যমে মানুষ নিজেই বাসযোগ্য এ পৃথিবীকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের একদল গবেষক গবেষণাটি চালিয়েছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন মতে, একাধিক কম্পিউটার সিমুলেশন বলছে, পৃথিবী একটি গণবিলুপ্তির মুখোমুখি হবে যার ফলে সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
নতুন এক গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের পরিণাম হিসেবে পৃথিবীর পরবর্তী গণবিলুপ্তি ঘটবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে এই গণবিলুপ্তি দ্রুততর হবে।
গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট যে, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মানুষ ও অন্য প্রাণীদের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হবে না। ফলে এসব প্রাণী গণহারে মারা পড়বে। যার মধ্যদিয়ে শুরু হবে গণবিলুপ্তি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২৫ কোটি বছরের মধ্যে পৃথিবীতে মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মানুষ যদি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এখনই একেবারে বন্ধ করে দেয় তাহলেও উক্ত সময়ের মধ্যে সেটা ঘটবে।
বিজ্ঞানীদের একটি অংশ বলছেন, পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংস তথা বনজঙ্গল উজাড় ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারের মতো কিছু কারণে গ্ৰীনহাউস গ্যাস বিশেষ করে কার্বন নির্গত হচ্ছে। যার ফলে পৃথিবী ক্রমশ উষ্ণ বা গরম হয়ে উঠছে। যা জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।
মানুষ যদি পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংস ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ না করে, পৃথিবীর এই উষ্ণায়ন বাড়তেই থাকবে। অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে বাড়বে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়, প্রাণিকুলের বিভিন্ন প্রজাতি তার স্বাভাবিক গতির চেয়ে ৩৫ গুণ বেশি গতিতে গণবিলুপ্তির পথে হাঁটছে। প্রত্যেক বিলুপ্তির সময় অনেক প্রজাতি হারিয়ে যায়; অন্যদিকে কিছু কিছু প্রজাতি টিকে থাকে। মানুষ যদি মনে করে যে হারিয়ে যাওয়ার এই চক্রে শুধু তারাই বেঁচে থাকবে, সেই ধারণা ভুল হবে।
Discussion about this post