সাফল্য জীবনে সহজে আসে না। সাফল্য পেতে গেলে করতে হয় অমানুষিক পরিশ্রম। যেমন প্রতি বছরই লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া ভারতের সবচেয়ে কঠিন সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। একজন দক্ষ প্রশাসকের ভূমিকায় নিজেকে দেখতে অনেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কোচিং সেন্টারে সময় কাটান। আবার অনেকে খরচ করতে না পেরে অমানুষিক পরিশ্রম করেন দিনরাত। আর এখানেই তৈরি হয় অসংখ্য গল্প, যাদের সাফল্য আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাতে খুব সাহায্য করতে পারে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা জয় করে অনেকেই ইউপিএসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিজেদের স্বপ্ন সফল করেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন বি আব্দুল নাসার।
কেরলের কুন্নুর জেলার থালাসেরি অঞ্চলের বাসিন্দা বি আব্দুল নাসার ৫ বছর বয়েসেই বাবাকে হারায়। ফলে সে এবং তাঁর ভাইবোনরা স্থান পায় এক অনাথ আশ্রমে। কারণ তাঁদের মা সামান্য গৃহ পরিচারকের কাজ করতেন। দীর্ঘ ১৩ বছর আব্দুল নাসারকে অনাথ আশ্রমে কাটাতে হলেও মাত্র ১০ বছর বয়স থেকে কাজ করতে হয়েছে। কখনও নিউজ পেপার বিলি, কখনও হোটেল রেস্তরাঁর সাফাইকর্মী। এরমধ্যেই সরকারি স্কুল এবং কলেজ থেকে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। কঠোর পরিশ্রমের ফলে আব্দুন নাসার স্নাতোকত্তর ডিগ্রি অর্জন করার পর ১৯৯৪ সালে কেরলের স্বাস্থ্য দফতরে চাকরি পান। তবুও পড়াশোনা ছাড়েননি আব্দুল নাসার। ২০০৬ সালে কেরল রাজ্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করে ডেপুটি কালেক্টর পদে আসীন হন। কিন্তু এখানেও থেমে থাকেননি এই লড়াকু যুবক। ২০১৭ সালে তিনি ইউপিএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করে সরাসরি আইএএস অফিসার হিসেবে উন্নীত হন। ২০১৯ সালে কেরলের কোল্লাম জেলার কালেক্টর বা জেলাশাসক পদে বসেন বি আব্দুল নাসার।
আইএএস হওয়ার আগে এক দীর্ঘ লড়াইয়ের সাক্ষী ছিলেন আব্দুল নাসারের মা এবং ভাইবোনেরা। খুব অল্প বয়স থেকেই অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া। এরপরও পড়াশোনার খরচ জোগার করতে নিউজ পেপার বিলি থেকে শুরু করে সাফাইকর্মীরা কাজ করা। পরে অসংখ্য টিউশন পড়িয়ে রোজগার করা। সবমিলিয়ে আর্থিক অনটন এবং হাজারো প্রতিবন্ধকতাকে জিতে একের পর এক কঠিন চাকরির পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হওয়া। শেষ পর্যন্ত একজন সফল আইএএস অফিসার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে বি আব্দুল নাসার এক রূপকথার গল্পের জন্ম দিয়েছেন।
Discussion about this post