সনাতন ধর্মে আমরা বেশ কিছু বৃক্ষকে দেবতা হিসাবে মেনে থাকি। তার মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকলের বাড়িতেই রয়েছে তুলসী বৃক্ষ। নিয়ম নেমে স্নান সেরে শুদ্ধ হয়ে তুলসী গাছে জল ঢালার রীতি যুগ যুগান্তরের। আবার তুলসীকে দেবী হিসাবে মেনে গাছের গায়ে বস্ত্রও পড়ান অনেকে। শুধু তুলসীই নয়, একইভাবে বট, অশ্বত্থ গাছকেও পুজো করে থাকেন অনেকে। কেন জানেন। বট বা অশ্বত্থ গাছকে পুজো কিংবা কেনই বা পুজোর অন্যতম উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়? এই প্রতিবেদনে আজ আপনাদের জানাবো সেই তথ্যই।
সনাতন ধর্মে প্রকৃতিকে আমরা মা হিসাবে মেনে থাকি। সেই মত ধরিত্রিতে থাকা সকল নদী, পাহাড়, পর্বত, গাছপালা প্রভৃতিকে প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ হিসাবে পুজো করে থাকি আমরা। হিন্দু ধর্মে মনে করা হয় গাছপালা পুজো করা অত্যন্ত শুভ। সকল গাছপালার মধ্যে অন্যতম হল অশ্বত্থ গাছ। লোক মুখে শোনা যায়, এই অশ্বত্থ গাছেই বাস করেন ত্রিদেব। সেই সঙ্গে শনিদেবকে তুষ্ট করতে অশ্বত্থ গাছের পুজো করে থাকেন অনেকেই। কথিত আছে, গাছের প্রতিটি পাতায় দেবতারা বিরাজমান। বিশেষ করে শনিবার অশ্বত্থ গাছে দেবী লক্ষ্মী ও ভগবান বিষ্ণু অধিবাস করেন। তাই সৌভাগ্য ও সুখ পেতে হলে অশ্বত্থ গাছের পুজো করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এই গাছকে কল্পবৃক্ষ বলা হয়ে থাকে। কেন জানেন ? মনে করা হয় দেবতাদের সঙ্গে এই গাছে বাস করেন পরোলোকের বাসিন্দারা। যেহেতু দেবতা ও উপদেবতার একসঙ্গে বাস এই গাছে, তাই এই বৃক্ষকে কল্পবৃক্ষ বলা হয়ে থাকে।
শ্রীমতভগবত গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, অশ্বত্থঃ সর্ব বৃক্ষাণাম, মূলতো ব্রহ্মরূপায়, মধ্যতো বিষ্ণুরূপিণে, অগ্রতঃ শিবরূপায় অশ্বত্থায় নমো নমঃ। অর্থাৎ এই শ্লোকটির অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, আমি বৃক্ষে অশ্বত্থ। যার শিকড়ে ব্রহ্মা, কাণ্ডে বিষ্ণু এবং পাতার অগ্রভাগে অধিষ্টিত শিব। অর্থাৎ, গোটা পাতা জুড়েই দেবতার বাস। জানেন কি, কীভাবে অশ্বত্থ গাছকে পুজো করলে ফল পাবেন হাতেনাতে। আসুন, জেনেনি অশ্বত্থ গাছ পুজো করার বেশ কিছু নিয়ম রীতি।।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, শুদ্ধ হয়ে প্রতি শনিবার অশ্বত্থ গাছে জল নিবেদন করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। তবে এ কাজ শুধু শনিবারই করবেন, ভুলেও রবিবার অশ্বত্থ গাছের গোড়ায় জল নিবেদন করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে আপনার।
আমরা তো সকলেই মন্দিরে গিয়ে পুজো দিই। তবে কি আমরা ব্রহ্ম মুহূর্তে পুজো দিয়ে থাকি? আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, ব্রহ্ম মুহূর্তে মন্দিরে গিয়ে ঈশ্বরের আরাধনা করা শুভ। কিন্তু ব্রহ্ণ মুহুর্তে ভুলেও অস্বত্থ গাছের গোড়ায় জল দেবেন না। এতে শ্রী লক্ষ্মী রুষ্ট হন। সূর্যদ্বয়ের পর গাছে জল দিলে, শ্রী লক্ষ্মী সেই পরিবারে কৃপা করেন।
মনে রাখবেন, ভুলেও অশ্বত্থ গাছ কাটবেন না। যদি ভুলেও এই গাছের একটি মাত্র ডালও কাটেন, তাহলে পরোলোকে যাওয়া পূর্বপুরুষরা কষ্ট ভোগ করেন। শুধু তাই নয়, বংশবৃদ্ধিতেও বাধা আসতে পারে। এই গাছ কাটতে হলে অবশ্যই পুজো অর্চনা হোম-যজ্ঞ করে কাটলে, কোনও দোষ লাগে না।
Discussion about this post