পুরীর জগন্নাথ মন্দির এমনিতেই জগৎ বিখ্যাত। সেই কারণেই প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ভক্ত ভিড় করেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে। বিশাল এই মন্দিরে প্রবেশের জন্য রয়েছে চারটি দরজা বা দুয়ার। কিন্তু করোনাকাল থেকে পুরীর চারটি দুয়ারের মধ্যে মাত্র একটি দুয়ার খোলা রাখা হয়েছিল। যা নিয়ে রাজনীতি কম হয়নি। পুরীর চারটি দরজাই খুলে দেওয়ার দাবি উঠছিল কয়েক বছর ধরে। কিন্তু অভিযোগ, ওড়িশার বিজু জনতা দলের সরকার সেই দাবি মানছিল না। ফলে করোনাকাল, লকডাউন অতীত হয়ে গেলেও পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের তিনটি দরজা ভক্তদের জন্য বন্ধই ছিল। এবার লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি ওড়িশায় বিধানসভা ভোটও হয়েছে। আর বিজেপি এবার বিধানসভার ইস্তেহারে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের চারটি দরজাই খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আর সেই ম্যাজিক কাজ করে যায়। নবীন পট্টনায়কের দীর্ঘ জমানা পাল্টে এবার ওড়িশায় পদ্ম ফুটেছে। সরকার গঠন করেছে বিজেপি। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিজেপির মোহন চরণ মাঝি। আর নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই তিনি প্রতিশ্রুতি মতো পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের চারটি দরজা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে শিলমোহর দিয়েছেন। এবার আপনাদের জানাই, পুরীর এই চারটি দরজার কী মাহাত্ম্য। কেনই বা পুরীর মন্দিরে চারটি দুয়ার তৈরি হয়েছিল।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রবেশদ্বারগুলি এমন কিছু রহস্য রয়েছে, যা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাকেও অস্বীকার করে। যুগ যুগ ধরে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, ভগবান জগন্নাথের আশির্বাদ বর্ষণ হয় চারটি প্রবেশদ্বারের একেকটি দিয়ে প্রবেশ করলে। সাধারণ অর্থে চারটি প্রধান দিকে চারটি প্রধান প্রবেশদ্বার। অর্থাৎ উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিমে চারটি প্রবেশদ্বার রয়েছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে। কিন্তু এই চারটি প্রবেশদ্বারের উদ্দেশ্য এবং মাহাত্ম্য আলাদা। এবার জেনে নেওয়া যাক, সেই মাহাত্ম্য সম্পর্কে।
ইস্টার্ন গেট বা সিংহদ্বার
করোনাকালের পর থেকে একমাত্র পুরীর মন্দিরের পূর্ব দিকের গেটটিই খোলা ছিল। এই দরজাটিকে সিংহদ্বার বলা হয়। সিংহ অর্থাৎ মূল দ্বার অর্থেও ব্যবহার হয়। অর্থাৎ এটিই জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশের প্রধান দরজা। কিন্তু আধ্যাত্মিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সিংহ পৃথিবীতে গুণ প্রচারের জন্য ভগবানের এক বিশেষ অবতার রূপে বিবেচিত হয়। আবার সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে, অর্থাৎ দিনের শুরু পূর্ব দিক থেকেই। সেই কারণে পুরীর মন্দিরের সিংহদুয়ারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই দরজা দিয়ে সাধারণ ভক্তের প্রবেশের অনুমতি। উল্লেখ্য, পুরীর মন্দিরের পূর্বদিকে সিংহদুয়ার মূলত মোক্ষের দরজা হিসেবে পরিচিত। এই দরজার বাইরে গৌড়িয় নৃসিংহ অবতার, সঙ্কটমোচন হনুমান এবং কাশী বিশ্বনাথের প্রতীকী ভাস্কর্য দেখা যায়।
ওয়েস্টার্ন গেট বা ব্যাঘ্র দুয়ার
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পশ্চিম দিকের দরজাটি হল ব্যাঘ্র দুয়ার। এই দরজার দুই দিকে দুটি বাঘের মূর্তি রয়েছে। বাঘ হল ধর্মের প্রতীক। এই দরজায় রামেশ্বর শিব, নৃসিংহ এবং হনুমানের প্রতীকী মূর্তি হয়েছে। এই গেট দিয়ে মূলত বিশেষ ভক্ত এবং সাধুসন্তরা প্রবেশ করেন।
নর্দান গেট বা হস্তি দুয়ার
হাতি হল সম্পদের প্রতীক। দেবী মহালক্ষ্ণীর বাহন হিসেবে গণ্য করা হয় হাতিকে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের উত্তর দিকের দ্বারটি হস্তি দ্বার হিসেবে পরিচিত। এককালে এই দুটি দরজার দুই দিতে দুটি হাতির বিশাল মূর্তি ছিল। মুঘল আক্রমণের জেরে সেগুলি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তবে পরবর্তী সময় এই হস্তি দ্বারের হাতির মূর্তি নতুন করে বসানো হয়েছে। এই দরজা দিয়ে মুনি-ঋষিরা প্রবেশ করেন।
সার্দান গেট বা অশ্ব দ্বার
দক্ষিণ দিকের গেটটি অশ্ব দুয়ার নামেই খ্যাত। এই দরজার দুই দিকে জগন্নাথ এবং বলভদ্রকে পিঠে নিয়ে দুটি ঘোড়ার মূর্তি রয়েছে। এই দুয়ার বিজয়ের প্রতীক। এককালে জগন্নাথের সম্রাট, রাজারা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য জগন্নাথদেবের আশির্বাদ নেওয়ার জন্য এই দরজা দিয়েই প্রবেশ করতেন।
Discussion about this post