ধোনির চোখে জল, তাও আবার ক্রিকেট মাঠে। যেখানে তিনি রাজত্ব করে, রাজকর হিসাবে পেয়েছেন তার সমর্থক তথা সারা ভারতবাসীর অকুন্ঠ্য ভালোবাসা সম্মান। সমালোচনা যে হয়নি তাও নয়। কিছু বুদ্ধিমান মানুষতো ঈশ্বরেরও সমালোচনা করেন, তাতে কি। তিনি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি,ঘাত প্রতিঘাত লড়াই করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন অগনিত মানুষের মনের মনিকোঠায়। শুরুর দিকে রাচি এবং বিহারের হয়ে বেশ কিছু ঘরোয়া ম্যাচ খেলার পর, ধোনি ২০০৩-০৪ মৌসুমে ভারতীয় এ-দলের হয়ে জিম্বাবুয়ে এবং কেনিয়া সফর করেন। হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে আয়াজিত জিম্বাবুয়ে একাদশের বিপক্ষে ধোনি তার সেরা সাফল্য হিসেবে ৭টি ক্যাচ ও ৪টি স্ট্যাম্পিং করেন।
কেনিয়া, ভারত-এ এবং পাকিস্তান-এ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় টুর্ণামেন্টে ধোনি পাকিস্তানের ২২৩ রানের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে হাফ সেঞ্চুরি করেন।সাফল্যের ইতিহাস তো তখন থেকে শুরু যখন পাকিস্তান-এ দলের বিপক্ষে ১২০ ও ১১৯ নটআউট – দু’বার সেঞ্চুরি করেন। ধোনি টুর্ণামেন্টে ৭ খেলায় ৬ ইনিংসে ৭২.৪০ গড়ে ৩৬২ রান করে ভারতীয় জাতীয় দলের তৎকালীন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি এবং রবি শাস্ত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু, ভারতীয় এ দলের কোচ সন্দীপ পাতিল দীনেশ কার্তিককে ভারতীয় দলে উইকেট-রক্ষক কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশ করেন।যদিও ২০০৪ সালের ২৩ শে ডিসেম্বর বাংলাদের বিরুদ্ধে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন একটি জায়গায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন- যেখানে থেকে ক্রিকেটের ভগবান, রাজা,মহারাজা, কারো সাথে কোন বিরোধ না ঘটিয়েই নিজের জায়গাটিতে স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।
ধোনি ক্রিকেট থেকে যত সম্মান নাম যশ খ্যাতি পেয়েছেন, তার থেকে অনেক বেশী দিয়েছেন ক্রিকেটকে। কারণ তিনি গড গিফটেড ক্রিকেটার নন।তিনি পরিশ্রম করে নিজের স্থান বানিয়েছেন ভারত তথা বিশ্ববাসীর মনে। তিনি যখন মাঠে নামেন তখন মনে হয় খেলাটা তার ইচ্ছা মত হচ্ছে। চার, ছয় আউট সব যেন তার প্লেন মাফিক হচ্ছে। তিনি শুধু নায়কই নন যেন চিত্রনাট্যকার নির্দেশক সবই তিনি। তাকে নিয়ে সমালোচনা করা যেতে পারে, কারণ তিনি সাধারণ মানুষ। কিন্তু ক্রিকেট ইতিহাসে কোন ট্রফি নেই যা তার ঝুলিতে আসেনি। আইপিএলেও চেন্নাইকে পাঁচবার ট্রফি জেতানো মানুষটা বয়সের কারণে যখন ক্রিকেট থেকে বিদায় নেবার প্রস্তুতি নেন তখনও তার ভক্তরা আশায় থাকেন হয়তো এবছর শেষ বছর নয়।
অসংখ্য অনুরাগী, মনে মনে গেয়ে ওঠেন- এ দেখাই শেষ দেখা নয়তো…. যদিও তার বন্ধু রায়না বিশ্বাস করেন এখানেই শেষ নয়। কিন্তু যদি তিনি মাঠে ক্রিকেটার হিসাবে না ফিরে আসেন, তার ইচ্ছা থাকলেও শরীরি চোট এবং বয়স যদি তাকে আর না ফিরতে দেয়। তাই তো আবেগ চেপে রাখতে পারলেন না তিনি, লুকাতে পারলেন না চোখের জল। মাঠেই ধরা পড়ল আবেগঘন মহুর্ত।অনেক আগেই তিনি তার উত্তরসূরী হিসাবে ঋতুরাজকে শুধু হাতে কলমে শিখিয়েই খ্যান্ত হননি। তিনি মাঠে থাকা কালিনই যোগ্য অধিনায়ক হিসাবে ঋতুরাজের প্রাপ্য সম্মানও দিয়েছেন নিজে। এখন দেখার এবারের আইপিএলেই চিপকে কি ধোনিকে আবার দেখা যাবে, উইকেটের পিছনে লাফিয়ে ক্যাচ ধরতে অথবা হেলিকপ্টার শট নিয়ে ভক্তদের আনন্দ দিতে।
Discussion about this post