দশ বছরের অপেক্ষার শেষে আর একবার ভারত সেরা আমাদের শহর কলকাতা । গত ১০ বছর থেকে উড়ে আসা সমস্ত অপমান, অপবাদ ট্রোল মিমের প্রতিবাদ এই ট্রফি। দশ বছরের ব্যর্থতার জবাব এই ট্রফি। গত ১০ বছর শাহরুখ খানের নিজের টিমের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার প্রতিদান এই ট্রফি । গৌতম গম্ভীর প্রমাণ করে দিলেন আরো একবার কেন তাকে কলকাতার ‘লাকি চার্ম’ বলা হয় । গত পাঁচ বছরে একবার মাত্র কোয়ালিফাই করতে বলেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। গৌতম গম্ভীর ফিরে আসতেই একবারে সোজা চ্যাম্পিয়ন । কিন্তু শুধুই কি ভাগ্যের জোরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কেকেআর? এই আইপিএল ট্রফিটা গম্ভীরের মাইন্ড সেটের ফসল। এই মাইন্ড সেটিংটাই তিনি সঞ্চারিত করেছিলেন শ্রেয়াস আইআর থেকে কেকেআরের সমস্ত খেলোয়ারের মধ্যে। শ্রেয়াস এই মরসুমে অসাধারণ অধিনায়কত্ব করেছেন।
ফাইনাল ম্যাচসহ মোট ১১ টি ম্যাচ জিতেছেন। কিন্তু মাঠের মধ্যে কখনোই অতিরিক্ত লাফালাফি ঝাপাঝাপি করতে দেখা যায়নি তাকে। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বোলার পরিবর্তন করেছেন, ফিল্ডিং সাজিয়েছেন।
ফাইনালে কেকেআরদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য হায়দ্রাবাদ মাত্র ১১৩ রানে অলআউট হয়ে যায়। আইপিএলের ফাইনালে সর্বনিম্ন স্কোর করতে বাধ্য হয় কেকেআর বোলারদের দাপটে। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের দর্শকরা একবারও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার সময় পায়নি অপরদিকে অসুস্থ শরীর নিয়ে মাঠে হাজির ছিলেন কেকেআর মালিক শাহরুখ খান । দুদিন আগেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু যেহেতু তার দল ফাইনাল খেলছে কাজে তিনি আর মাঠের বাইরে থাকেন থাকেন কি করে? আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান করা হায়দ্রাবাদ কে সর্বনিন্ম রানে শুধু আটকে রাখাই নয়, ১১৪ রান তাড়া করতে নেমে কলকাতা যেন ছেলে খেলা করলো হায়দ্রাবাদের বোলারদের নিয়ে। একদিনের বিশ্বকাপ জেতা অধিনায়ক স্টার্ক ম্লান হয়ে গেল কেকেআরের ব্যাটসম্যানদের দাপটে। গুরবাজ এবং বেঙ্কটেশ কেকেআর-কে পাওয়ার প্লে তেই অনেকটা এগিয়ে রাখলেন । মাত্র ১০ ওভার তিন বলে হায়দ্রাবাদকে হারিয়ে ম্যাচ জিতল কেকেআর ।
এখানে মেন্টর গৌতম গম্ভীরের কৃতিত্ব । ভারতবাসী হলেও গৌতম গভীরে মানসিকতা অস্ট্রেলিয়ানদের মতো। বিপক্ষকে দুমড়ে মুচরে তিনি জিততে পছন্দ করেন। দলে স্টারডম প্রথার পক্ষপাতি নন, তিনি মনে করেন একটি দলের ট্রফি জেতার জন্য সবার সমান অবদান থাকে। তাই তিনি কোন বিশেষ একজনকে নয় সবাইকে সমান চোখে দেখেন।
আইপিএল ট্রফি জেতার পর গৌতম গম্ভীরের ভারতীয় কোচ হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা । আর কয়েক মাস পরেই তিনি দায়িত্বনিতে চলেছেন রোহিত, কোহলি, হার্দিক, বুমরাদের, সবাই সেটাই চাইছেন। সত্যিকারের এই জয়ের পেছনে আর যাদের নাম না বললেই নয়, তারা হচ্ছেন বোলিং কোচ ভরত অরুন চিফ কোচ চন্দ্রকান্ত পন্ডিত এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট কোচ অভিষেক নায়ার। গৌতম গম্ভীদের সঙ্গে মিলিয়ে এরাও সমানভাবে খেটেটেছে আমাদের শহরে আইপিএল ট্রফি ফিরিয়ে আনার জন্য। ১০ বছর আগে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে হারিয়ে যখন ট্রফি জিতেছিল তখন কলকাতার ইডেনের মাঠে উৎসব পালন করেছিল। এ বছরও ইডেন ভরিয়ে দেওয়ার জন্য সারা বাংলা তৈরি। এবারও একটা উৎসব হলে দশ বছরের খরা কাটিয়ে সবাই আনন্দ করতে পারবে।
Discussion about this post