আশা জাগিয়েও শেষ রক্ষা হল না। শেষ করতে পারল না ইস্টবেঙ্গল এফসি। আইএসএলের শেষ ম্যাচে পাঞ্জাবের কাছে ৪-১ গোলে হেরে গেল লাল-হলুদ শিবির। প্লে অফের দৌড় থেকে ছিটকে গেল ইস্টবেঙ্গল। ইস্টবেঙ্গলের এই হারের সঙ্গে সঙ্গে এ দিন ২১ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকায় ছ’নম্বর জায়গাটা পাকা করে ফেলল চেন্নাইন এফসি। অর্থাৎ, আইএসএলের এই মরশুমের সেরা ছ’টি দল নিশ্চিত হয়ে গেল, যারা খেলবে প্লে-অফ রাউন্ডে। তবে কে কত নম্বরে শেষ করবে, তা ঠিক হতে এখনও অপেক্ষা করতে হবে কয়েকদিন।
বুধবার সারা ম্যাচে ২০টি গোলের সুযোগ তৈরি করে পাঞ্জাব এফসি। সেখানে আটটির বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কলকাতার দল। সব মিলিয়ে ১৮টি শট মেরেছেন লুকা মাজেন, মাদি তালালরা, যার মধ্যে ন’টি ছিল লক্ষ্যে ও চারটি গোলে। তাদের প্রতিপক্ষ সারা ম্যাচে মোট আটটি শট রাখে গোলে। যার মধ্যে মাত্র দু’টি ছিল লক্ষ্যে। এই পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দিচ্ছে, শেষ ম্যাচে একেবারেই ছন্দে ছিল না লাল-হলুদ শিবির। চাপের কাছে নতিস্বীকার করে তারা। বরং চাপমুক্ত পাঞ্জাব এফসি এ দিন লিগের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স দেখায় এবং লিগ তালিকায় ১১ নম্বর থেকে লাফিয়ে আট নম্বরে উঠে এসে অভিযান শেষ করে। ইস্টবেঙ্গল রয়ে গেল সাতেই।
পাঞ্জাবের তিন বিদেশী অ্যাটাকার লুকা মাজেন, মাদি তালাল ও উইলমার জর্ডন এ দিন ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেন। দুই অর্ধে জোড়া গোল করেন জর্ডন ও বাকি দুটি গোল আসে মাজেন ও তালালের পা থেকে। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে অনবদ্য গোল করেন বাংলার উঠতি ফরোয়ার্ড সায়ন ব্যানার্জি। কিন্তু তাঁর এই গোল কোনও কাজে আসেনি ক্লেটন সিলভা, নাওরেম মহেশদের ছন্দে না থাকার জন্য।
শুরুতে আগোছাল ফুটবল খেললেও দুই দলের খেলায় গতি ছিল। মিনিট পাঁচেক মূলত মাঝমাঠ-নির্ভর খেলা হয় ও তার পর থেকে একে অপরের গোল এরিয়ায় প্রবেশ করা শুরু করে। তবে পাঞ্জাবের মাদি তালাল ও উইলমার জর্ডন যে ভাবে জুটি বেঁধে আক্রমণে উঠছিলেন, তেমন কোনও জুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি ইস্টবেঙ্গলে।
১৮ মিনিটের মাথায় প্রায় গোল লাইনের পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে পাঞ্জাবের অবধারিত গোল বাঁচান ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক কমলজিৎ সিং, যিনি এ দিন প্রভসুখন গিলের পরিবর্তে মাঠে নামেন। এ দিনই প্রথম এ মরশুমের আইএসএলে নামা কমলজিৎ প্রথম পরীক্ষায় পাস করলেও পরের মিনিটেই গোল হজম করেন উইলমার জর্ডনের পা থেকে।
ডানদিকের উইং দিয়ে উঠে বক্সের মধ্যে যখন জর্ডনকে কাটব্যাক করেন পাঞ্জাবের তরুণ মিডফিল্ডার কিপজেন, তখন তাঁর সামনে হিজাজি মাহের থাকলেও জর্ডনকে আটকাতে পারেননি। কিপজেনকেও অনায়াসে বল কাট করতে দেন ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডাররা। বক্সের মধ্যে সুবিধাজনক জায়গায় বল পেয়ে দ্বিতীয় পোস্টের দিকে শট নেন জর্ডন এবং তা জালে জড়িয়ে যায় (১-০)।
এর দু’মিনিট পরেই বক্সের মধ্যে সায়ন ব্যানার্জির উদ্দেশ্যে ক্রস বাড়ান ভিক্টর ভাজকেজ। ঠিকমতো বলে পা লাগাতে পারলে হয়তো গোল পেয়ে যেতে পারতেন সায়ন। কিন্তু পারেননি। এ দিন, শৌভিক চক্রবর্তীর জায়গায় প্রথম দলে থাকা সায়ন শুরু থেকেই তৎপর ছিলেন। বরং পিভি বিষ্ণুকে কিছুটা হলেও বিবর্ণ লাগে। বেশ কয়েকবার পরপর উইং বরাবর স্প্রিন্ট নেন তিনি এবং গোলের সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করেন।
এই তৎপরতার ফল তিনি পান ২৫ মিনিটের মাথায়, যখন মাঝমাঠে মহম্মদ সালার পা থেকে বল কেড়ে একাই দ্রুত দৌড়ে প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারকে ধোঁকা দিয়ে কাট-ইন করে বক্সের সামনে এসে সোজা গোলে শট নেন ও তা জালে জড়িয়ে যায় (১-১)। এই গোলের পরেই হাঁটুতে চোট পান সায়ন এবং কিছুক্ষণের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান চিকিৎসার জন্য।
গোল খাওয়ার পরই ফের ব্যবধান তৈরির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে মাদি তালালরা এবং ৩৫ মিনিটের মাথায় ইস্টবেঙ্গলের বক্সের মধ্যে বিপজ্জনক ক্রস পাঠান লুকা মাজেনের উদ্দেশ্যে, কিন্তু সেই বিপদ সামলে দেন হিজাজি। কিন্তু ৪৩ মিনিটের মাথায় থ্রো ইন থেকে বল পেয়ে বাঁ দিক দিয়ে উঠে যে ভাবে বল নিয়ে কাট-ইন করে বক্সে ঢুকে পড়েন তালাল, তা কেউ সামলাতে পারেননি।
বক্সে ঢুকে বেশ কঠিন কোণ থেকে গোলে শট নেন ফরাসি মিডফিল্ডার এবং মরশুমে প্রথম মাঠে নামা কমলজিতের মাথার ওপর দিয়ে তা জালে জড়িয়ে যায় (২-১)। কমলজিৎ বলে হাত লাগাতে পারলেও তাতে কোনও লাভ হয়নি। প্রথমার্ধের বাড়তি সময়েও জর্ডনের কাটব্যাক থেকে বল পেয়ে গোলে শট নেন তালাল, যা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর জর্ডনের শটও গোলের বাইরে চলে যায়। প্রথমার্ধে সায়নের গোল ছাড়া আর কোনও শটই নিতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। পাঞ্জাব মোট চারটি শট নেয়, যার মধ্যে দু’টি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় ও দু’টি থেকে গোল হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সায়নের জায়গায় ফরোয়ার্ড আমন সিকে ও পিভি বিষ্ণুর জায়গায় মিডফিল্ডার শ্যামল বেসরাকে নামায় ইস্টবেঙ্গল। হিজাজি মাহেরকে ওপরে তুলে দেওয়া হয়। তরতাজা খেলোয়াড় দলে আসায় আক্রমণে ধার বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করে তারা। এর মধ্যে অবশ্য ৪৯ মিনিটের মাথায় ফের ইস্টবেঙ্গলের জালে বল জড়িয়ে দেন লুকা মাজেন। কিন্তু সহকারী রেফারি অফসাইডের ফ্ল্যাগ তোলায় সে গোল বাতিল হয়ে যায়।
এর দু’মিনিট পরেই মহম্মদ সালাহকে ড্রিবল করে যখন বক্সের মধ্যে নিশু কুমারের উদ্দেশ্যে ক্রস পাঠান আমন, তখন গোলের সামনে পৌঁছে যান মহেশ। কিন্তু তাঁকে বল বাড়ানোর আগেই নিশু নিয়ন্ত্রণ হারান। ছ’নম্বরে জায়গা অর্জন করার তাগিদ নিয়ে মাঠে নামা ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে এ দিন যে মরিয়া ভাব থাকা উচিত ছিল, তা এ দিন সে ভাবে দেখা যায়নি। বরং অনেক বেশি তৎপর ছিলেন তালাল, মাজেন, জর্ডনরা। চাপমুক্ত পাঞ্জাব এফসি যে ম্যাচটা উপভোগ করতে নেমেছিলেন, তাদের খেলা দেখে সেটাই বোঝা যায়।
৬২ মিনিটের মাথায় ফের গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে প্লে অফের দৌড় থেকে ছিটকে দেন সেই উইলমার জর্ডন। ডানদিকের উইং বরাবর উঠে গোলের সামনে তাঁকে ক্রস পাঠান তালাল এবং নিখুঁত ক্রসে নিখুঁত টোকা দিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন জর্ডন (৩-১)। এই গোলের ঠিক আগেই তালাল আরও একটি গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন।
মহেশ ও ক্লেটনের যে জুগলবন্দি দেখেত চেয়েছিলেন লাল-হলুদ সমর্থকেরা, তা প্রথম এবং একবারই দেখা যায় ম্যাচের ৬৭ মিনিটের মাথায়, যখন মহেশের ক্রস থেকে গোলের উদ্দেশ্যে হেড করেন ক্লেটন সিলভা। কিন্তু তা বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। ক্লেটন ও মহেশের তীব্র আক্রমণাত্মক মুভ এ দিন প্রায় দেখাই যায়নি।
তৃতীয় গোল খাওয়ার পর হিজাজির বদলে ফেলিসিও ব্রাউনকে নামান ইস্টবেঙ্গল কোচ কুয়াদ্রাত। কিন্তু তাতে নিজেদের গোলের সংখ্যা বাড়েনি, বাড়ে প্রতিপক্ষের গোলের সংখ্যা। ৭০ মিনিটের মাথায় পাঞ্জাবের হয়ে চতুর্থ গোলটি করেন লুকা মাজেন। এ বার তিনি ও তালাল নিজেদের মধ্যে ওয়ান টু খেলতে খেলতে প্রতিপক্ষের ফাইনাল থার্ডে ঢোকেন ও বক্সে প্রবেশ করে সোজা গোলে শট নেন মাজেন (৪-১)। এই নিয়ে চলতি লিগে নিজে ছ’টি গোল করার পাশাপাশি দশটি অ্যাসিস্ট করলেন তালাল। আইএসএলের প্রথম মরশুমে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্টের নজির এতদিন ছিল গ্রেগ স্টুয়ার্টের দখলে। এ বার তাঁকে ছুঁয়ে ফেললেন তালাল।
তৃতীয় গোল খাওয়ার পর যেমন ব্রাউন নামেন, তেমন চতুর্থ গোল খাওয়ার পর আলেকজান্দার প্যানটিচকে নামানো হয় ভিক্টর ভাজকেজের জায়গায়। কিন্তু ততক্ষণে লাল-হলুদ ফুটবলারদের শরীরের ভাষাই বলে দিচ্ছিল, তারা হাল ছেড়ে দিয়েছে। পাঞ্জাবের গোলের সংখ্যা আরও বাড়ত, যদি ৮৩ মিনিটের মাথায় লুকা মাজেনের শট হেড করে গোললাইন সেভ না করতে পারতেন হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা।
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ০-৩ হারের পর প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন নতুন কোচ গৌতম গম্ভীর ।আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সফরে ৫ টেস্টের সিরিজে রোহিত...
Read more
Discussion about this post