ভারতীয় ক্রিকেটে কোচ এবং অধিনায়কের যুদ্ধ নতুন নয়।এর আগেও সৌরভ এবং চ্যাপেল নিয়ে অস্থির ছিল ভারতীয় ক্রিকেট। বর্ডার-গাওস্কর সিরিজ়ে প্রথম থেকেই ঘটনার ঘনঘটা। তবে তা সীমাবদ্ধ ছিল মাঠের মধ্যে। ক্রিকেটার-ক্রিকেটারে ঠোকাঠুকিতে কখনও মহম্মদ সিরাজ়-ট্রাভিস হেড, বিরাট কোহলি-স্যাম কনস্টাস। কিন্তু সিরিজ়ের শেষ লগ্নে অগ্নুৎপাত শুরু হয়েছে ভারতীয় সাজঘরের অন্দরে। যা থেকে অনেকের মনে পড়ে যাচ্ছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-গ্রেগ চ্যাপেল অধ্যায়ের কথা। জ়িম্বাবোয়ে সিরিজ় থেকে এ ভাবেই যার সূত্রপাত।
গত বৃহস্পতিবার এসসিজি-র প্রেস বক্সে ভারতের সাংবাদিক বৈঠক শুরু হওয়ার আগে হঠাৎই চাঞ্চল্য ছড়ায়। দু’টি চেয়ার রাখা ছিল সেখানে। শেষ বার এই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ব্রিসবেনে। রোহিতের পাশের চেয়ারে এসে বসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। জল্পনা তৈরি হয়, তা হলে কি রোহিতের পাশে বসে কোহলি অবসর ঘোষণা করবেন? নাকি দু’জনেই একসঙ্গে অবসরের সিদ্ধান্ত জানাবেন? গুঞ্জন চলাকালীনই জানা গেল, ‘গুরু’ গম্ভীর আসছেন সাংবাদিক বৈঠকে। মিনিট দশেক পরে তাঁর প্রবেশ। কোচ না অধিনায়ক, দলের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে অতীতে বহু বারই বিতর্ক হয়েছে। যে কোনও দলগত খেলাতেই এই ঘটনা বিরল নয়। কোচ এবং অধিনায়ক দু’জনেই খ্যাতনামী হলে ভিতরে ভিতরে ক্ষমতার লড়াই লেগেই থাকে । অনেক ক্ষেত্রেই কোচ দলের চালিকাশক্তি হন। আবার কিছু ক্ষেত্রে অধিনায়কের হাতে থাকে দলের ‘রিমোট কন্ট্রোল’।
সিডনিতে বৃহস্পতিবার গম্ভীর বুঝিয়ে দিয়েছেন, অধিনায়ক যিনিই হোন, যত ওজনদারই হোন, তাঁকে টপকে কথা বলতে পারবেন না। গম্ভীরের রকমসকম দেখে অনেকে বলতে শুরু করেছেন, ‘‘বিসিসিআই বোধহয় ভুলে গিয়েছিল, উনি এর ঠিক আগেই লোকসভার সাংসদ ছিলেন।’’কোচ এবং অধিনায়কের ঝামেলা ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন নয়। সেই তালিকার এর অব্যবহিত আগেরটি হল অনিল কুম্বল বনাম কোহলি। কুম্বলের শৃঙ্খলাপরায়ণ মানসিকতার সঙ্গে তৎকালীন অধিনায়ক কোহলি মানিয়ে নিতে পারেননি। দলের অন্দরেই বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন। পাশে কয়েক জনকে পেয়ে যাওয়ায় সেই ‘বিদ্রোহ’ প্রকাশ্যে চলে আসে। কুম্বলে কোনও দিন পাঁকের মধ্যে সাঁতার কাটা পছন্দ করেননি। তিনি নীরবে সরে যান।তবে সবচেয়ে বিতর্কিত অধ্যায় নিঃসন্দেহে সৌরভ বনাম গ্রেগ। দেশকে বিশ্বকাপ ফাইনালে তোলা অধিনায়ক সৌরভ তত দিনে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সফল নেতার তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু দলে তাঁর ‘কর্তৃত্ব’ মেনে নিতে পারেননি গ্রেগ। তিনি কোচ থাকাকালীন একাধিক বার সৌরভ দল থেকে বাদ পড়েছেন, ফিরেছেন, আবার বাদ পড়েছেন।
দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার বদলে এই দ্বন্দ্ব একটা সময়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। শুধু সৌরভ নন, গোটা দলই তখন গ্রেগ এবং তাঁর কোচিংয়ের ধরন নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল। তবে প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু সেই দ্বন্দ্ব ভারতীয় ক্রিকেটে দীর্ঘকালীন ছায়া ফেলে গিয়েছিল।কিন্তু গম্ভীরও নরমসরম নন। উল্টে ‘রগচটা’ বলেই পরিচিত। ক্রিকেটমাঠে গোলমালে জড়িয়ে পড়ার ইতিহাস তাঁর বরং খানিক বেশিই আছে। তিনি রাহুল দ্রাবিড় ঘরানার নন যে, অধিনায়ক যা বলবেন শুনে নেবেন। গম্ভীরের রক্তে আগ্রাসন। তাঁকে হাসতে কম দেখা যায় । নিজের টিমের সদস্য নবীন উল হককে বাঁচাতে যেমন তিনি কোহলির সঙ্গে মাঠের মধ্যে ঝগড়া করতে পারেন, তেমনই কোহলিকে বাঁচাতে মিচেল স্টার্ক বা প্যাট কামিন্সের চোখে চোখ রাখতেও দু’সেকেন্ড ভাবেন না। ফলে তিনি যে দলেরও ‘নিয়ন্ত্রণ’ চাইবেন, তাতে আর আশ্চর্য কী!শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সিডনি টেস্ট। তবে সেটা নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের আর তেমন আগ্রহ নেই। কারণ, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নয়, ‘আসল ম্যাচ’ হচ্ছে সিডনি ক্রিকেট মাঠের বাইরে। সেখানে যুযুধান প্রতিপক্ষ রোহিত শর্মা এবং গৌতম গম্ভীর। ভারতীয় দলের অধিনায়ক এবং কোচ। ক্রিকেটের অন্যতম বলশালী এবং ক্ষমতাশালী দলের দুই প্রধান পদ।
Discussion about this post