একদিকে যখন গোটা দেশ সেনাবাহিনীর গর্বে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছেন, সেখানে তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান সাংসদ সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা খুঁজতে ব্যস্ত। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন দমদম লোকসভার তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তৃণমূল সংসদের এই বক্তব্য সামনে আসতেই নিন্দার ঝড় শুরু হয়ে যায়। সেনাবাহিনীকে অপমানের প্রতিবাদে পথে নামে বিজেপি।
কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় শোকাহত গোটা দেশ। কিন্তু ভারতীয় বীর সেনাবাহিনীর সাহসিকতা ‘অপারেশন সিঁদুর’র মাধ্যমে পাকিস্তানের কোমর ভেঙে দেওয়াতে দেশবাসীর যন্ত্রণা খানিকটা মালুম হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতের একশনে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি থেকে শুরু করে ১০০ টির বেশি জঙ্গি মারা গিয়েছে। একের পর এক পাকিস্তানি ড্রোন, মিসাইল ধ্বংস করে দিয়েছে ভারত। অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবরণ দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছেন ভারতের তিন বাহিনীর প্রতিনিধিরা। চার দিন ধরে চলা ভারত পাকিস্তান সংঘর্ষ থামে। প্রথমে এই বার্তা আসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে। তিনি প্রথম দাবি করেন, দুই দেশ সংঘর্ষ বিরতিতে যেতে সম্মত হয়েছে। তারপরই নয়া দিল্লি এবং ইসলামাবাদীর তরফে বিবৃতির জারি করা হয়। ভারত পাকিস্তান সংঘর্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। এমন কি কেউ কেউ কেন্দ্রকে কাঠগোড়াতেও তুলেছিলেন। কিন্তু ভারতীয় বীর সেনাদের কৃতিত্ব নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন তোলেনি। আর সেই কাজটাই এবার করে ফেললেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, এসব বানিয়ে বানিয়ে বলা। কোথায় জঙ্গি খাঁটি ধ্বংস হয়েছে, তার প্রমাণ কেন্দ্রীয় সরকার রাখুক মানুষের সামনে। আমি তো দেখছি ছবিতে। ওই একটা দুটো মাসুদ আজাহারের পুরনো ভাঙ্গা বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। একে কি জঙ্গি খাঁটি ধ্বংস করা বলে?
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের জেলেনিস্কি পেরেছেন, মোদী পারল না। আসলে কোন যুদ্ধই হয়নি। ব্যাপারটা প্রায় হাস্যকর হয়েছে ড্রোন এদিক থেকে অধিক দিয়েছে দু একটা মিসাইল এদিক থেকে অধিক গিয়েছে। কোন মেজর তফাৎ হয়নি। এমনকি এটা ভারতবর্ষের কাছে লজ্জার বলেও জানিয়েছেন তৃণমূল সংসদ।
অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপি সরকারের তীব্র বিরোধিতা করতে গিয়ে ভারতীয় বীর সেনাকেই অপমান করলেন তৃণমূল সাংসদ। আর এই ঘটনায় এবার প্রতিবাদে নামলেও বিজেপি। বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তর কলকাতার সংগঠনিক জেলা বিজেপির তরফে পথ অবরোধ এবং রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। মুরোলিধর সেন লেন থেকে এগিয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে বেশকিছু ক্ষণ বিক্ষোভ চলে। প্রতিবাদ মিছিল থেকে কলকাতা উত্তর কলকাতার বিজেপি জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ বলেন, সৌগত রায় যে মন্তব্য করেছেন তার জন্য দেশের সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চেয়ে প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে আমরা ওকে ঘেরাও করবো। যেখানে আগামী ১৭ এবং ১৮ মে গোটা রাজ্য জুড়ে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে মিছিল করার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহসিকতা এবং এই সংঘর্ষে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, সেখানে সেই দলেরই সাংসদ এই ধরনের মন্তব্য করেন। এমনকি ওই মিছিলে কোন রাজনৈতিক স্লোগান দেওয়া যাবে না বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে। তৃণমূল সাংসদের এহেন মন্তব্যে নিন্দার ঝড় ওঠে রাজনৈতিক মহলে।
Discussion about this post