তাঁর কথাতেই বীরভূমে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত। বীর ভূমির সেই দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল বর্তমানে গরু পাচার মামলায় জেলে বন্দি রয়েছেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই তাঁকে বোলপুরের নীচুপট্টির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে ২০২২ সালে। অনুব্রতের গ্রেফতারির পর তৃণমূল কংগ্রেস তাঁর পাশে দাঁড়ায়। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম কেষ্টকে ‘বীরভূমের বাঘ’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কার্যত ২০১১ সালের পালাবদলের বিধানসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট পর্যন্ত পঞ্চায়েত কিংবা লোকসভা প্রত্যেক ভোটে, বীরভূমে শাসকদলের নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে কেষ্ট মণ্ডল ছিলেন শেষ কথা। একাধিকবার বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্ক তৈরি করলেও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় তাঁর পাশে ছিলেন।
বিরোধীদের ‘গাঁজা কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়ার’ হুমকি থেকে শুরু করে কখনও পুলিশের গায়ে বোম মারার নিদান দিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। শুধু তাই নয় নির্দল প্রার্থীর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার নিদান দিয়েছিলেন একদা বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি। যদিও তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে যখন সমালোচনার ঝড় উঠেছিল সেই সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেত্রী তাঁর পাশে ছিলেন। ২০১৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘কেষ্টর মাথায় অক্সিজেন কম যায়’। অনুব্রত মণ্ডল নিজেও ‘দিদির’ কথাতে সিলমোহর দিয়েছিলেন, তিনি দাবি করেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক বলেছেন। তাঁর মাথায় অক্সিজেন কম পৌঁছয়। ২০২২ সালে অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারের আগেও পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, ‘অনুব্রতকে অ্যারেস্ট করলে বাকিদেরও করতে হবে..ওর গায়ে হাত দিয়ে দেখুক’।
যদিও সেইসব দিন এখন অতীত। অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার কিছুদিন পরে তাঁকে দলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে আসন্ন নির্বাচনে দলের তরফে প্রার্থী করা হয়েছে বিদায়ী সাংসদ শতাব্দী রায়কে। কেষ্টহীন বীরভূমে তৃণমূলের সেই দাপট আর নেই। কার্যত কোণ ঠাসা জোড়াফুল শিবির। ভোট প্রচারে হোঁচট খাচ্ছেন শতাব্দী রায়। প্রচারে বেরিয়ে বারংবার তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের মধ্যে পড়ছেন। যা নিয়ে কার্যত বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেছিলেন শতাব্দী রায়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৃণমূলের সিলেবাস হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সম্প্রতি লোকসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে সেখানে মানুষের বিক্ষোভের মুখেও পড়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। তার উপরে বিজেপির তরফে প্রার্থী করা হয়েছে প্রাক্তন আইপিএস দেবাশিস ধরকে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে শতাব্দীর বিরুদ্ধে ভাল লড়াই দিতে পারেন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা। প্রসঙ্গত আইপিএস দেবাশিস ধর কোচবিহারের এসপি থাকাকালীন সময়ে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে শীতলকুচিতে গুলি চালনার ঘটনা ঘটেছিল। পরবর্তী সময় তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। সম্প্রতি তিনি চাকরি ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন।
Discussion about this post