পুরুলিয়া: পুরুলিয়া জেলায় শুরু হল নীল চাষ। তাঁত শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে নীল চাষের গুরুত্ব বাড়ছে। অতি উৎকৃষ্টমানের নীল উৎপাদন সম্ভব লাল মাটির জেলায়।
ভিও- বাংলা জুড়ে একটা সময় হাতে বোনা তাঁতের দারুণ মাহাত্ম্য ছিল। হাল ফ্যাশনে এখন বাজারে নিত্য নতুন শাড়ির সম্ভার। চকমকে রঙ ও ডিজাইন নতুন প্রজন্মের কাছে দারুণ আকর্ষণ। কাজেই কিছুটা ব্যাকফুটে বাংলার তাঁতশিল্প। এছাড়া তাঁত বুনতে পরিশ্রমও অধিক। কাজের হিসেবে পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক না মেলার অভিযোগও রয়েছে। কাজে কাজেই বাজারে একধারে যেমন তাঁতের কাপড়ের চাহিদা কমেছে অন্যদিকে তাঁত শিল্পীরাও মুখ ফিরিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে লাল মাটির দেশ পুরুলিয়ায় নতুন করে প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে তাঁতশিল্প। এর নেপথ্যে রয়েছে নীল চাষ। সাধারণত তাঁতের কাপড়ের সুতোর রঙের জন্য পলাশ, শিমুলের পাতার ব্যবহার হয়ে থাকে। এবার নীল রঙের জন্য অর্গানিক পদ্ধতিতে নীল চাষ শুরু হয়েছে। পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকা টুক্যা গ্রামে এই নীল চাষ শুরু করেছেন বেশ কয়েকটি আদিবাসী পরিবার।
ব্রিটিশ আমলে বাংলায় একসময় নীল চাষের বাড়বাড়ন্ত ছিল। নীলচাষিদের উপর ব্রিটিশদের অত্যাচারের কাহিনী আজও বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে রক্তে লেখা। ঘটনার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গ্রাম বাংলার বুকে বিভিন্ন নীলকুঠি। কাপড়ে রঙ দেওয়ার জন্য সে আমলে বহুল ব্যবহৃত এই নীল ব্রিটিশ ভারতে ইংরেজদের সর্বাধিক লাভজনক পণ্যের তালিকায় অন্যতম ছিল।ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করার পর ব্রিটিশরা এদেশিয় চাষিদের দিয়ে কম খরচে নীল উৎপাদন শুরু করে। ব্রিটিশরা আগে ওড নামক একপ্রকার গাছ থেকে নীল তৈরি করতো। ভারতবর্ষে বাণিজ্য শুরু করার পর ব্রিটিশ বণিকরা পশ্চিম ভারত থেকে নীল কিনে নিয়ে যেত ইউরোপে। দেশীয় আদি পদ্ধতিতে তৈরি এই নীলই ইউরোপের বাজার থেকে ওডের রংকে সরিয়ে দেয়, এনে দেয় সন্তোষজনক মুনাফা।
পুরুলিয়ার মাটিতে নীল চাষ সেই ব্রিটিশ ভারতের কথাই মনে করাচ্ছে। নীল চাষে কোনপ্রকার রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে না। অর্গানিক পদ্ধতিতে নীল চাষ করে লাভবান হচ্ছে এলাকার চাষিরা। এই নীল ব্যবহার করা হচ্ছে তাঁতের কাপড়ে। তাঁতশিল্পীরা জানাচ্ছেন জৈব পদ্ধতিতে তৈরি রঙ কাপড়ে ব্যবহার করায় সেই কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে। এতে রোজগারের নতুন দিশা দেখছেন স্থানীয় মানুষ। এমনকি পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ ছেড়ে অনেকেই নীল চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন
Discussion about this post