গোটা দেশ তথা রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে দেবাদিদেব মহাদেবের নানা মন্দির। প্রতিটি মন্দিরেরই রয়েছে অলৌকিক কোনও ঘটনার সঙ্গে বাবার অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে পারবেন আপনি। আমাদের রাজ্যেও দেবাদিদেবের এমন অনেক মন্দির রয়েছে, যা রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়নি আজও। তার মধ্যে অন্যতম হল হুগলি জেলায় বাবা তারকেশ্বর মন্দির। সারা মাস ছাড়াও শ্রাবন মাস ও চৈত্র মাসে বাবার বিশেষ পুজো উপলক্ষ্যে মন্দিরে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতন। এই দুই মাস ভর বাঁকে করে জল নিয়ে বহু দুরদূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন মন্দিরে। এই মন্দিরের নামানুসারেই নামকরণ হয়েছে স্টেশনের।
তবে জানেন, এই মন্দিরে বাবা তারকেশ্বরের গর্ভগৃহের সোজাসুজি একটি ছোট পুকুর রয়েছে। যা সকলের কাছে দুধ পুকুর হিসাবে পরিচিত। কথিত আছে, এই পুকুরে ডুব দিলেই সেরে যায় দুরারোগ্য ব্যাধি। শুধু তাই নয়, দুধ পুকুরে ডুব দেওয়ার সময় আপনি যা মনোস্কামনা করবেন তা সহজেই পূরণ হয় বলে বিশ্বাস ভক্তদের। পাশাপাশি সারা বছরই এই মন্দিরে বাবা তারকনাথের কাছে অনেক আবেদন নিবেদন নিয়ে আসেন ভক্তরা। কথিত আছে, রাত দিন বাবার চরণে হত্যে দিলেই মিলবে ফল। সেই আসায় দিনের পর দিন মন্দিরে দেবাদিদেবের মূল কক্ষ সংলগ্ন ঘরে হত্যে দেন ভক্তরা। জানেন রাত নামলই এক হাতে ডুমরু ও অপর হাতে কলকে নিয়ে গোটা মন্দিরে ঘুরে বেড়ান মহাদেব। সেই সময় ভক্তদের স্বপ্নাদেশে আসেন তিনি। পূরণ করেন ভক্তের মনোবাঞ্ছা। এমনকি যদি কোনও ভক্ত কোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে বাবার দ্বারস্থ হয়, তাহলেও সেই ভক্তকে কৃপা করেন বাবা তারকনাথ। জানেন, তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের নীল ষষ্ঠীর দিনে এই দুধ পুকুরে ঢেউ ওঠে। কিন্তু কংক্রিটের পার বাঁধানো এই পুকুরটিতে কীভাবে ঢেউ আসে, তার রহস্য আজও জানা যায়নি।
তবে চৈত্র সংক্রান্তির আগে নীলের পুজো উপলক্ষ্যে বাবা তারকনাথের বিশেষ পুজো হয়। পুজো উপলক্ষ্যে মেলাও বসে মন্দির প্রাঙ্গণে। পাশাপাশি চৈত্র মাস ভর সন্ন্যাস জীবন যাপন করার পর নীল ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় নীলের বাতি জ্বালান সন্ন্যাসরা। শুধু তাই নয়, প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী, সন্তান লাভের জন্য বামুন বামনি যখন কাশিতে বসে দুঃখ করছিলেন। সেই সময় মা ষষ্ঠী বুড়ির ছদ্মবেশ ধরে তাঁদের দুঃখ শুনে নীল ষষ্টী পালনের নিদান দেন। বুড়ির কথা শুনে নীল ষষ্টীর ব্রত পালনের পরেই তারা তাঁদের হারানো সন্তান ফিরে পায়। এরপর থেকেই নীলের ব্রত পালনের মাহাত্ম্য দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। শিবের অন্যান্য পুজোর মত এইপুজোতেও বেলপাতা অবশ্যই প্রয়োজন। কারন বিলপত্র ছাড়া মহেশ্বরের আরাধনা একেবারেই অসম্পূর্ণ। এছাড়া আকন্দ ফুল ও ফল, পাঁচটি মরসুমী ফল, আতপচাল, চন্দন, সুগন্ধি, ঘি, মিষ্টি সহযোগে পুজো করা হয়। একই সঙ্গে দুধ বা গঙ্গাজল ঢেলে মহাদেবকে স্নান করান মহিলারা। এরপর সন্ধ্যায় সন্তান ও সংসারের সুখ শান্তির জন্য নীলের বাতি জ্বেলে দেবাদিদেব আরাধনা করেন শিব ভক্তরা। এভাবেই মর্তে প্রচলন হয় নীল ষষ্ঠীর ব্রত ।
Discussion about this post