অ্যাঙ্কর- ভোটের মুখে জোড়া ঘা রাজ্যের বিজেপি শিবিরে। একদিকে সন্দেশখালি ইস্যুতে ভাইরাল ভিডিও ও অন্যদিতে রাজ্যপাল ইস্যু। সন্দেশখালি আন্দোলন নিয়ে ভোটের পালে হাওয়া তুলেছিল বিজেপি। এখন প্রশ্ন এবার তাহলে কি হবে? সন্দেশখালি। মার্চ মাসের শুরুতে এই একটি নামে তোলপাড় হয়ে উঠেছিল বাংলার রাজনীতি। সন্দেশখালির মা-বোনেদের উপর শাহজাহানবাহিনীর অত্যাচারের কাহিনী সামনে এসেছিল। অন্যায়ভাবে জমি ভেড়ি দখল, রাতের অন্ধকারে মেয়েদের সম্মান লুট। এই ছিল সন্দেশখালির কেন্দ্রবিন্দুতে। বলাবাহুল্য বাংলার এক অখ্যাত জায়গা রাতারাতি পরিচিতি পেয়েছিল রাজ্য ছাড়িয়ে জাতীয় রাজনীতিতে। ভোটের মুখে এমন সুযোগ ঘাসফুল শিবিরের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেনি বিজেপি। আন্দোলনের পাশাপাশি মোদী, অমিত শাহদের মত সর্বভারতীয় নেতাদের মুখে বার বার ফিরেছিল সন্দেশখালির কথা। সন্দেশখালি ইস্যুকে জিইয়ে রাখতে সবরকম চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই সন্দেশখালি আন্দোলন নিয়ে আচমকা ভোটের মাঝে টুইস্ট। নেপথ্যে গঙ্গাধর কয়াল নামে বিজেপির এক বুথ সভাপতির ভিডিও। যেখানে তিনি বলছেন সন্দেশখালিতে ধর্ষণের পুরো ঘটনাটাই সাজানো। কোথায় কি বলতে হবে অভিযোগকারী মহিলাদের সবটাই শিখিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
মাত্র ২ দফার ভোট শেষ হয়েছে রাজ্যে। এখনও ৫ দফার ভোট বাকি। দফার গোনাগুনতিতে এখনও মাঝ পর্বেও পৌঁছায়নি রাজ্যের নির্বাচন। আর এমন কাণ্ড। ভিডিওর শুরু থেকে শেষ গঙ্গাধরের মুখে উঠে এসেছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম। ভিডিওতে গঙ্গাধর দাবি করছেন সন্দেশখালির সাজানো গল্পের পরিকল্পনা শুভেন্দুরই মস্তিষ্কপ্রসূত। স্বাভাবিকভাবে এমন ভিডিও সামনে আসায় অস্বস্তি বেড়েছে পদ্মবনে। গঙ্গাধর ইতিমধ্যেই সিবিআই এর দ্বারস্থ হয়েছেন। চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে দাবি রেখেছেন পুরো বিষয়টাই তদন্ত করে দেখার জন্য। গঙ্গাধর পুত্র জ্যোতির্ময় কয়াল দাবি করছেন ভিডিওতে শোনা কথাগুলি পুরোটাই এডিটের কারসাজি। সাজানো কথা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর বাবা গঙ্গাধর কয়ালের মুখে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন সন্দেশখালি নিয়ে ভোট মরশুমে বড় ফ্যাসাদে পড়েছে বিজেপি। আর এই ফ্যাসাদ থেকে বেরোতে অতি দ্রুত সঠিক কৌশলের প্রয়োজন। ভোট রাজনীতিকে মাথায় রেখে যে ভাবে সন্দেশখালিকে সামনে আনা হয়েছিল এই ভিডিও প্রকাশের পর তার কম বেশি প্রভাব ভোটারদের উপর পড়তে বাধ্য। এই তো গেল সন্দেশখালি। সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিও প্রকাশ্যে আসার ঠিক ৪৮ ঘণ্টা আগে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে নিয়ে বিরল অভিযোগ। রাজভবনের এক অস্থায়ী মহিলা কর্মীর দাবি রাজ্যপালের কাছে দু-দুবার যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেন তিনি। রাজ্যপাল কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের শাসকদলের নেতা কর্মীরা তৎক্ষনাৎ এই ইস্যু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কারণ তারা বার বার এই দাবি করে আসেন রাজ্যপাল কেন্দ্রের প্রতিনিধি অর্থাৎ বিজেপির। যদিও এই ঘটনায় আক্রমণের ধার বাড়ায়নি বিজেপি। বরং হাবেভাবে প্রকাশ্যে তারা এটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন এটা তাদের দলীয় বিষয় নয়। পুরোটাই রাজভবন ও রাজ্যপালের বিষয়।
কথায় বলে খেলা আর রাজনীতির পট পরিবর্তন অত্যন্ত নাটকীয়। কখন কি হয় বলা কঠিন। মুহুর্তের মধ্যে ঘুরে যেতে পারে রাজনীতির খেলাও। যে সন্দেশখালি নিয়ে এত আন্দোলন আজ সেই সন্দেশখালি নিয়ে কোণঠাসা গেরুয়া শিবির। গেরুয়া দলের নেতারা ভাইরাল ভিডিও নিয়ে মুখে যাই দাবি করুক না কেন, বেকায়দায় যে পড়েছে যে রাজনীতি বোঝে না সেও এককথায় স্বীকার করে নেবে।
Discussion about this post