নিজস্ব প্রতিনিধি: ৪২ দিন আগে বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরমের ক্যাফেতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় জখম হন ১০ জন। ১ মার্চ এর সেই ঘটনার পর আততায়ীদের সন্ধানে হন্যে হয়ে খোঁজ চালিয়েছেন তদন্তকারীররা। অবশেষে শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। ধৃতদের নাম আবদুল মাথিন আহমেদ ত্বহা ও মুসাভির হুসেইন শাজিব। এনআইএ-এর তরফে জানানো হয়েছে, মুসাভিরই ক্যাফের মধ্যে বিস্ফোরক রেখে এসেছিল। গোটা পরিকল্পনার পিছনে ছিল ত্বহা। পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল আইইডি।
কীভাবে সন্দেহভাজন দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করলেন তদন্তকারীরা?
বিস্ফোরণের পর এনআইএ-এর হাতে তদন্ত ভার যায় ৩ মার্চ। তদন্তভার হাতে নিয়ে প্রায় ৩০০ সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা। সেই সঙ্গে দক্ষিণ ভারত জুড়ে চিরুণি তল্লাশি শুরু করেন গোয়েন্দারা। কর্নাটক, কেরল, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ুর একাধিক শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে অবশেষে সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করেন গোয়েন্দারা। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, মুসাভির হুসেইন শাজিব বিস্ফোরণকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ট। আর তার সঙ্গী ছিল ত্বহা। দু’জনেই কর্নাটকের বাসিন্দা। শিবমোগা জেলার তীর্থহল্লির বাসিন্দা মুসাভির এবং ত্বহা। এনআইএ এর গোয়েন্দারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হয়েছেন, মুসাভির ওই দিন ক্যাফেতে ঢুকে আইইডি রেখে এসেছিল।
দুই জনকে চিহ্নিত করার পর প্রত্যেকের মাথার দাম ১০ লাখ টাকা করে ধার্য করেছিল এনআইএ। শুধু তাই নয়, ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল এনআইএ এর তরফে। কিন্তু দুই সন্দেহভাজনের পরিচয় জানতে খানিক বেগ পেতে হয় তদন্তকারীদের। নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে দুই জঙ্গি ভিন্ন ভিন্ন নামে আধার কার্ড তৈরি করেছিল। ব্যবহার করা হয়েছিল ভুয়ো সিম কার্ড। ঘটনার পর দুজনে গা ঢাকা দিতে পশ্চিমবঙ্গে আসে। এদিকে জঙ্গিদের বিষয়ে সতর্ক করা হয় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে। এনআইএ এর সতর্কবার্তার পরে তৎপরতা বাড়ায় লালবাজার। দুই জঙ্গির সন্ধানে তল্লাশি শুরু করে লালবাজার ও ভবানী ভবন। মধ্য কলকাতার এক হোটেলেও দুই জঙ্গি ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়ে রাত্রিযাপন করেছিল।
তদন্তকারীরা জানান, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, কর্নাটক এবং ত্রিপুরার ভুয়ো পরিচয়পত্র ব্যবহার করেছিল অভিযুক্তরা। সেই পরিচয়পত্র দেখিয়ে মূলত ভিড় এলাকার কম বাজেটের হোটেলে ঘর ভাড়া নিত। যতটা সম্ভব মোবাইল ফোন ব্যবহার কম করা যায় সেদিকে সতর্ক ছিল ধৃতরা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, চেন্নাই থেকে কেনা টুপি ছিল এক সন্দেহভাজনের মাথায়। সেই টুপি দেখে সন্দেহ হয়েছিল। পাশাপাশি দিঘার একটি হোটেলে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি দিন থাকতে শুরু করেছিল তারা। যা তাদের প্রতি সন্দেহের জন্ম দেয় তদন্তকারীদের। দুজনকে অনুসরণ করার পর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ১২ এপ্রিল শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা থেকে পুলিশের সাহায্য নিয়ে তাদেরকে পাকড়াও করে এনআইএ গোয়েন্দদারা।
Discussion about this post