ফের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। যাত্রী বাহী ট্রেনের পিছনে ধাক্কা মালবাহী ট্রেনের। শিয়ালদার দিকে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। মালগাড়ির ধাক্কায় ট্রেনের পিছন দিকের দু’টি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে বলে খবর। বহু যাত্রী আহত হয়েছেন। চলছে উদ্ধারকাজ। রেল পুলিশ জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। ২৫ থেকে ৩০ জন আহত। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জানা গেছে, সোমবার সকালে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে নির্ধারিত সময়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। ট্রেনটির পেছনে ধাক্কা মারে একটি মালবাহী ট্রেন। নীজবাড়ি এবং রাঙাপানি স্টেশনের মাঝে দুর্ঘটনা ঘটে। ইতিমধ্যেই রেল এবং রাজ্যে প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকেরা দূর্ঘটনা স্থলে পৌছে উদ্ধারকার্য তদারকী করছে।
এই দুর্ঘটনার ফলে এই মুহূর্তে ব্যাহত হয়েছে উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যাবস্থা। আজ সকালে ঘটনাস্থল থেকে দার্জিলিং পুলিশের অ্যাডিশনার এসপি অভিষেক রায় বলেন, ‘‘কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে মালগাড়ি ধাক্কা মেরেছে। পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৫ থেকে ৩০ জন আহত। সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। গ্যাসকাটার দিয়ে কেটে মালগাড়ির ইঞ্জিন বার করতে হবে। সামনে একটি জায়গায় অস্থায়ী ভাবে আহতদের নিয়ে গিয়ে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী হাসপাতালে পাঠানো হবে। আহতদের অবস্থা স্থিতিশীল।’’
প্রসঙ্গত, শিলিগুড়িতে সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি চলছে। তার মাঝে এই দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজও ব্যাহত হচ্ছে। যে লাইনে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, কলকাতা থেকে শিলিগুড়ির সঙ্গে রেল যোগাযোগের প্রধান লাইন সেটাই। ফলে আপাতত দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কীভাবে একই লাইনে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ওই লাইনেই মালগাড়ি চলে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ রেলের দাবি সিগন্যাল বিভ্রাটের জেরেই সম্ভবত এই দুর্ঘটনা। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ঘটনায় গভীর উদ্যোগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন এস পি, ডি এম ছাড়াও মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে রওনা হয়ে গিয়েছে। আপৎকালীন তৎপরতায় উদ্ধার কার্য চলছে। দুর্ঘটনাগ্রস্থ ট্রেনের যাত্রীদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে নবান্ন ও শিয়ালদাতে ইতিমধ্যেই খোলা হয়েছে হেল্পলাইন। মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, “নবান্নে চালু করা হচ্ছে কন্ট্রোল রুম। দার্জিলিং জেলা ও উত্তর দিনাজপুর জেলায় চালু করা হচ্ছে কন্ট্রোল রুম। এছাড়া আমরা সব হাসপাতালগুলিকে অ্যালার্ট করেছি। এটি একটা বড় দুর্ঘটনা যা খবর আসছে আমাদের কাছে। স্থানীয় বিডিও, এসডিও সবাই পৌঁছেছেন”। রেল দুর্ঘটনার পরে রেলের তরফে হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে শিয়ালদহ স্টেশনে।
শিয়ালদা হেল্পলাইন নম্বর – ০৩৩২৩৫০৮৭৯৪ / ০৩৩২৩৮৩৩৩২৬।
অন্যান্য হেল্পলাইন নম্বরগুলি হল
একইসঙ্গে এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবও।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২২ সালে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির কাছে দোমোহনিতে লাইনচ্যুত হয়েছিল বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেই ঘটনায়। আবার ২০২৩ সালের ২ জুন ওড়িশার বালেশ্বরে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ওই ট্রেনের সঙ্গে একটি মালগাড়ি এবং বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের ধাক্কা লাগে। ২৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেই ঘটনায়।
Discussion about this post