ভারতের রাজধানী দিল্লি। কেন্দ্রের অধীনে থাকলেও এখানে একটা বিধানসভা আছে। মোট আসন ৭০টি, সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য দরকার ৩৬টি আসন। ৫ ফেব্রুয়ারি, বুধবার সকাল থেকেই দিল্লিতে চলছে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া। কিন্তু বেলা গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলেও কোথাও নেই কোনও গোলমালের ঘটনা, হয়নি কোন বোমাবাজি, কোথাও গুলি চলেনি, ঘটেনি কোনও রক্তারক্তি কাণ্ড। অথচ আমাদের পশ্চিমবঙ্গ, যেখানে দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী রয়েছে অর্থাৎ কলকাতা। এখানকার ভোটে যদি গোলমাল না হয়, বোমাবাজি বা গুলি না চলে, তাহলে অবাক হয়ে যায় গোটা দেশবাসী। কেন এত পার্থক্য?
দিল্লিতে জাতীয় সংসদ ভবন, রাষ্ট্রপতি ভবন-সহ দেশের প্রধানমন্ত্রী বা অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বাস। তবে তাঁরা সকলেই যে দিল্লির বাসিন্দা তা নয়। ফলে এমনিতেই দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই কঠোর থাকে। তাই নির্বাচনের দিন খুব একটা গোলমালের সুযোগ থাকে না। কিন্তু নয়া দিল্লি বা পুরোনো দিল্লির এলাকার বাইরে যে সংযোজিত এলাকা বৃহত্তর দিল্লির অন্তর্গত, সেখানে ভোটে গোলমালের নজির আছে। দুপুর তিনটে পর্যন্ত ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় ভোট পড়েছে ৪৬. ৫৫ শতাংশ। উত্তর-পূর্ব দিল্লি আসনে সর্বাধিক ৫২. ৭৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। সবচেয়ে কম ৪৩. ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে নিউ দিল্লি বিধানসভা কেন্দ্রে। এই আসন থেকেই ভোটে লড়ছেন দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। লড়াইয়ে আছেন আরও দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে।
দিল্লির ভোট মানেই একসময় ছিল কংগ্রেসের আধিপত্য। এরপর বিজেপি তাঁদের আধিপত্যে থাবা বসায়। দিল্লি বিধানসভা ও লোকসভায় দীর্ঘদিন বিজেপির কর্তৃত্ব ছিল। কিন্তু অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির উত্থান সব হিসেব-নিকেশ উল্টে দেয়। দিল্লি চলে যায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির দখলে। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে আম আদমি পার্টির সর্বোচ্চ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তার ক্যাবিনেটের কয়েকজন শীর্ষ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতি অভিযোগ। কেজরিওয়াল ও তার সঙ্গী মনীষ সিসদিয়াকে জেলে যেতে হয়। দিল্লি ভোটের আগেই পারভিন কেজির বাল জেল থেকে ছাড়া পেলেও তিনি পূর্ণ শক্তিতে রাজনীতিতে আসতে পারছেন না। ফলে ত্রিমুখী লড়াইয়ের এই দিল্লি বিধানসভা ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চললেও তা সীমাবদ্ধ রাজনীতির ময়দানে। কোথাও কোনো বড় ধরনের গোলমাল বা সংঘর্ষের ঘটনা নেই। কিন্তু আমাদের পশ্চিমবঙ্গে এটা সম্ভব না। এখানে ভোট মানেই গোলমাল।
কার্শিয়াং থেকে কাকদ্বীপ, বনগাঁ থেকে বান্দোয়ান, পশ্চিমবঙ্গে ভোট মানেই রক্তারক্তি কান্ড। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের দাবী, এ রাজ্যে মানুষ ভীষণভাবেই রাজনীতি সচেতন। তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিজেপি, বাম দলগুলি বা কংগ্রেস প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলেরই কর্মী ও সমর্থক সংখ্যা বেশ নজরকাড়া। শহরের সীমা ছাড়িয়ে একটু শহরতলী বা গ্রামের দিকে ঢুকলে বোঝা যায়, শাসকদলের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব। সে বাম আমলেই হোক বা বর্তমান তৃণমূলের আমলে। জোর যার মুলুক তাঁর। ফলে নির্বাচন আসলেই পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়ে যায় হুমকির রাজনীতি। ভোট পূর্ববর্তী হিংসা, ভোটের দিন হিংসা ও ভোট পরবর্তী হিংসা, এই শব্দগুলি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কার্যত ব্যাকরণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের লাগামহীন সন্ত্রাস গ্রাম বাংলায় একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে। যে এলাকায় বিরোধীরা সামান্য হলেও এগিয়ে, সেই এলাকায় সন্ত্রাসের মাত্রাও প্রবল হয়। তাই পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন মানেই সন্ত্রাস। যেটা দিল্লি বা অন্য কোথাও দেখা যায় না।
Discussion about this post