আমেরিকার মসনদে রিপাবলিকার প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বসা কার্যত পাকা। এই অবহে বাংলাদেশের কপালে কি নাচছে সেটা নিয়েই চলছে জল্পনা কল্পনা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের অনেকেরই দাবি, কমলা হ্যারিস জিতলে ভাল হতো, কিন্তু ট্রাম্প জিতলে বাংলাদেশের কপালে দুঃখ আছে। আর হচ্ছেও তাই। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্পই ইতিহাস গড়ে আমেরিকায় ফের ক্ষমতায় আসছেন। ফলে বাংলাদেশের ভবিষৎ যে সরু সুতোয় ঝুলছে, এ কথা বলাই বাহুল্য।
বর্তমানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ডামাডোলে ডুবে থাকা বাংলাদেশ যে শঙ্কিত তা নিয়ে নিশ্চিন্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এর যথেষ্ট কারণও আছে। প্রথমেই উল্লেখ করা যায়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা একটি ট্যুইটের কথা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প লিখেছিলেন, “আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বর্বর হিংসার তীব্র নিন্দা জানাই। তাদের আক্রমণ করেছে উন্মত্ত জনতা, লুঠপাট করেছে। সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমি ক্ষমতায় থাকলে এটা ঘটত না। কমলা এবং জো সারা বিশ্বের এবং আমেরিকার হিন্দুদের উপেক্ষা করেছে। ইসরায়েল থেকে ইউক্রেন, এমনকি আমাদের দক্ষিণ সীমান্তেও বিপর্যয় নেমে এসেছে। কিন্তু, আমরা আমেরিকাকে আবার শক্তিশালী করব এবং শক্তির মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনব!” নির্বাচনী প্রচার পর্বে তিনি যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে আক্রমন করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন, তা অনেকটাই নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য। মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হওয়া হামলা ও অত্যাচার নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন। ট্রাম্পের টুইটেও সেই ভাষ্য পাওয়া গিয়েছিল। স্পষ্টতই, মার্কিন হিন্দু ভোটারদের আকৃষ্ট করার কৌশল হিসেবেই ট্রাম্প এই টুইট করেছেন। আর আমেরিকায় বসবাসকারী হিন্দু প্রধান এলাকায় ট্রাম্প বিপুল ভোটে জিতেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই টুইট থেকে তাঁর ভবিষ্যৎ নীতিরও ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। আর সেটা বাংলাদেশের পক্ষে ভাল খবর নয়। যদিও বাংলাদেশ সরকার এই ট্যুইট গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য ছিল, নির্দিষ্ট লবি বা গ্রুপ প্রভাব খাটিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়ে এই ট্যুইট করিয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পযে কতটা অভ্রান্ত ছিলেন, তা ভোটের ফলেই প্রতিফলিত হচ্ছে।
গত অগস্ট মাসে হাসিনার বিদায়ের পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ফোন করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ভারতের নরেন্দ্র মোদি। তবে, মোদির সেই বক্তব্যকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি বাইডেন প্রশাসন। ফলে কমলা হ্যারিসের সময়েও ডেমোক্র্যাট শিবিরের এই অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। কারণ, ট্রাম্পের সেই ট্যুইট থেকেই স্পষ্ট তাঁর প্রশাসন বাংলাদেশ নিয়ে অন্তত বাইডেনের সময়ের মতো চোখ বন্ধ করে থাকবে না।
যদিও, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বক্তব্য ভিন্ন। তিনি জানিয়েছেন, রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট, আমেরিকান দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেই ড. মহম্মদ ইউনুসের সম্পর্ক খুব ভাল। তাই, এই নির্বাচনের ফলাফলের কোনও প্রভাব বাংলাদেশের উপর পড়বে না। কিন্তু দেশ পুনর্গঠনের জন্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছিল বাংলাদেশের বর্তমান সরকার। সেটা ছিল বাইডেন প্রশাসন। তাঁরা অতিরিক্ত ২০ কোটি ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু এবার আমেরিকায় ক্ষমতায় আসতে চলেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দুই দেশের সম্পর্কের বর্তমান কাঠামোকে সমর্থন করবেন না বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে, গোটা বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়েও তাঁর প্রশাসন সম্ভবত খুব একটা আগ্রহী হবে না। এমনকি রোহিঙ্গাদের জন্য যে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছিল বাইডেন প্রশাসন, তাতেও বিপুল কাটছাঁট করতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকা যে বিশ্বের সুপারপাওয়ার, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে, ভারতও ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের দাদা। নরেন্দ্র মোদির আমলে এটাই উঠে এসেছে। অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। প্রচার পর্বেও বারবার ট্রাম্প নরেন্দ্র মোদীকে ‘চমৎকার মানুষ’, ‘আমার বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার ফলে আমেরিকা-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে ভারত ঢুকে পড়তেই পারে। সেই ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে ইউনুস সরকারের সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলে আগামীদিনে বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। এ কথা বলাই বাহুল্য।
Discussion about this post