একসময় প্রতি বছরই মহালয়ার দিন দূরদর্শনের পর্দায় অসুরের ভূমিকায় তাঁকেই দেখা যেত। এমনকি অসুরের ভূমিকায় অভিনয় করে দারুণ জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলেন তিনি। আজ তিনিই একাকী, নিঃসঙ্গ। উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগরের সংহতি পার্ক এলাকায় টিনের চালের ছোট্ট কুটিরে দিন কাটান বৃদ্ধ অসুর। নাম অমল চৌধুরী, এলাকার মানুষ তাঁকে অমল অসুর বলেই চেনেন। বেশ কয়েক বছর মহালয়ার দিন সকালে দূরদর্শনের এক বিশেষ অনুষ্ঠানে মহিষাসুর সাজার জন্য তাঁরই ডাক পড়েছে। আর দুর্গার সঙ্গে প্রবল যুদ্ধরত মহিষাসুর রূপী অমল চৌধুরীকে দর্শকরাও খুব পছন্দ করে ফেলেছিলেন। কিন্তু সেই দিন আর নেই, কার্যত কন্দর্পহীন অবস্থায় ছোট কুঠীরে একাকী দিন কাটে তাঁর। আজ বৃদ্ধ বয়েসে এসে সঙ্গী হয়েছে প্রবল আর্থিক অনটন।
একটা সময় ছিল, যখন অমল চৌধুরীর টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ায় অবাধ যাতায়াত ছিল। দূরদর্শনের পর্দায় শুধু মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের জন্য নয়, বরং বাংলা সিনেমা এবং টেলিভিশনের পর্দায় অভিনয় করতেন তিনি। যদিও বেশিরভাগটাই খল চরিত্র অর্থাৎ ভিলেনের পার্টে অভিনয় করেছেন তিনি। সেই হিসেবেই তিনি ছিলেন পরিচিত মুখ। তবে দূরদর্শনে মহালয়ার দিন হওয়া মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানে মহিষাসুরের চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন অশোকনগরের অমল চৌধুরী। পেশাদার অভিনয়ের জগতে যথেষ্ট নাম-ডাকও হয়েছিল তাঁর। কিন্তু বর্তমানে ভাগ্যের পরিহাসে তাঁর জীবনে নেমে এসেছে কঠোর বাস্তবতা।
বৃদ্ধ বয়েসে তিনি এখন আর টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ায় যেতে পারেন না। ফলে কাজ নেই। সেই সঙ্গে নেই পরিবারের কেউ। একে একে হারিয়েছেন বাবা, মা, দাদা, বৌদি, দিদিদের। অকৃতদার এই বৃদ্ধ এখন অশোকনগরের সংহতি পার্ক এলাকায় এক টিনের চালের ছোট্ট ঘরে থাকেন। দীর্ঘ অসুস্থতায় ভুগছেন। আর কাজ বলতে টুকটাক গ্যারেজে আসা গাড়ির নম্বর প্লেট লেখা। বা কখনও দেওয়াল লিখনের ডাক পান। একসময় মহালয়ায় তাঁকে টিভির পর্দায় দেখে তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় জমাতেন বহু মানুষ। রাস্তায় বের হলেই অনেকে তাঁকে ছেকে ধরতেন। আর আজ ঠিক উল্টোটাই ঘটে। অমলবাবুর স্মৃতি আজ ভারাক্রান্ত সেই সমস্ত স্বর্ণালী দিনের কথা ভেবে। আজ কেউই আসেন না তাঁর খোঁজ নিতে। রাজ্য সরকারের তরফে বা শাসকদলের নেতা-নেত্রীরাও খোঁজ নেন না। কারণ অসুর বৃদ্ধ হয়েছেন।
Discussion about this post