আশ্বিন মাসের শুক্লা চতুর্দশী তিথি। বিশ্বাস এই দিনেই মা তারা স্বয়ং তারাপীঠে আবির্ভূতা হয়েছিলেন। ফলে প্রতি বছর এই দিনে তারাপীঠে হয় বিশেষ পূজা অর্চনা। ভক্তরাও দূর-দূরান্ত থেকে আসেন তারাপীঠে। আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠেন সকলে। তবে এ বছর আনন্দের মাত্রা বহুগুণ বেড়েছে, কারণ একই দিনে পড়ে গিয়েছে লক্ষ্ণীপুজোও। ফলে বুধবার তারাপীঠে বিপুল ভক্ত সমাগম হয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক মা তারার আবির্ভাব তিথির ইতিকথা।
বহুকাল পূর্বের কথা। তখন দ্বারকা নদ এখনকার মতো শীর্ণকায় ছিল না। এই নদেই পালতোলা নৌকা ভাসিয়ে জয়দত্ত নামে এক বনিক বাণিজ্য সেরে ফিরছিলেন। কিন্তু কোনওভাবে সাপের কামড়েই তাঁর পূত্রের মৃত্যু হয়েছিল। বণিক জয়দত্ত তাঁর পুত্রের মৃতদেহ নিয়ে সেই নৌকা করেই ফিরছিলেন। পূত্রশোকে তিনি ব্যকুল হয়ে পড়েন। পথে বর্তমান তারাপীঠ মহাশ্মশানের কাছেই এক জায়গায় নৌকা নোঙর করেন মাঝি-মল্লারা। খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করার জন্য তাঁরা সেখানে ক্ষণিক বিশ্রাম নিয়েছিলেন। বণিকের সঙ্গে থাকা ভৃত্য এবং মাঝিরা শোল মাছ ধরে সেগুলি কেটে পাশেই পরিস্কার জলের একটি পুকুরে ধুতে নিয়ে যান। কিন্তু ওই পুকুরের জলে টুকরো করে কাটা শোল মাছ জ্যান্ত হয়ে লাফিয়ে পুকুরের গভীরে চলে যায়।
এই অলৌকিক ঘটনায় মাঝি ও ভৃত্যরা ছুটে গিয়ে জয়দত্তকে সবটা বলেন। এই বর্ণনা শুনেই জয়দত্ত তাঁর মৃত পূত্রকে নিয়ে ওই পুকুরে যান, এবং তাঁর গায়ে সেই পুকুরের জল ছিটিয়ে দিতেই জয়দত্তের মৃত পুত্র জীবিত হয়ে ওঠেন। এই পুকুরটিই জীবিতকুণ্ড নামে পরিচিত। ওই রাতেই বণিক জয়দত্তকে স্বপ্নে দেখা দেন মা তারা। ওই দিনটি ছিল আশ্বিন মাসের শুক্লা চতুর্দশী। তাই এই দিনটিই তারাপীঠে মা তারার আবির্ভাব দিবস হিসেবে পালন করা হয়। পরবর্তী সময় বণিক জয়দত্ত মা তারার পবিত্র ব্রক্ষ্ণশিলা উদ্ধার করে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন।
এ বার একই দিনে পড়েছে লক্ষ্ণীপুজো। তাই এবার তারা মাকে লক্ষ্ণী রূপেও পুজো করা হবে। যদিও প্রতি বছর আবির্ভাব তিথিতে মা তারাকে গর্ভগৃহ থেকে বের করে বাইরের বিশ্রাম কক্ষে রাখা হয়। জীবিতকুণ্ড থেকে জল এনে মাকে স্নান করিয়ে রাজবেশ পড়ানো হয়। বছরের একমাত্র এই দিনেই সকল ভক্ত মা তারা শিলামূর্তি স্পর্শ করতে পারেন। তারাপীঠের অদূরেই রয়েছে মা মৌলাক্ষার মন্দির। বিশ্বাস তিনি মা তারার ছোট বোন। তাই এই দিনে তারাপীঠের পশ্চিম দিকে মৌলাক্ষা মন্দিরের দিকে মুখ করে বসানো হয় মা তারাকে। আবির্ভাব তিথিতে সারাদিন মায়ের অন্নভোগ হয় না। তাঁকে ফলমূল নিবেদন করা হয়। তবে সূর্যাস্তের পর মা তারা শিলামূর্তি ফের গর্ভগৃহে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিন যেহেতু লক্ষ্ণীপুজো পড়েছে, তাই রাতে মা তারা মহালক্ষ্ণী রূপে পুজো করা হচ্ছে। দেবীকে নিবেদন করা হয় মহাভোগ। তাতে রয়েছে, খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচরকম ভাজা, শোলমাছের পদ, বলির মাংস এবং পায়েস।
Discussion about this post