কালীপুজোর সময় নৈহাটি স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে বেড়িয়ে অরবিন্দ রোড ধরে গঙ্গার ঘাটের দিকে যেতে গেলে পর পর চোখে পড়বে বিশাল বড় বড় কালীমূর্তি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মূর্তিটি হচ্ছে বড়মার। বিশাল মূর্তি, তিন চোখেই প্রখর তেজ। গা ভর্তি সোনা, রুপোর গহনা। এক ঝলক দেখলেই ভয় এবং ভক্তিতে মাথা আপনা হতেই নত হয়ে আসবে। ভক্তরা বলেন, অলৌকিক শক্তি রয়েছে বড়মার। তাই তো দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত ছুটে আসেন নৈহাটির বড়মার কাছে। আর কালীপুজোর দিন তো কথাই নেই, লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয় নৈহাটিতে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, কেন দেবীকে ‘বড়মা’ নামে ডাকা হয়? তাঁর মাহাত্ম্যই বা কী? কে কবে থেকে এই পুজো শুরু করেছিলেন?
নৈহাটির বড়মার কষ্টিপাথরের স্থায়ী মূর্তি
২০২৩ সালে নৈহাটির বড়মার পুজো ১০০ বছরে পদার্পণ করেছিল। সেই হিসেবে এ বছর বড়মার পুজো ১০১ বছরে পড়ল। অর্থাৎ এই পুজোর প্রচলন হয়েছিল ১৯২৩ সালে। জানা যায়, নৈহাটি এলাকার বাসিন্দা কালীভক্ত ভবেশ চক্রবর্তী তাঁর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে গিয়েছিলেন নদিয়ার নবদ্বীপে রাশ উৎসব দেখতে। সেখানে রক্ষাকালীর বড় একটি মূর্তি দেখে তিনি মোহিত হয়ে যান। তাঁর মনে সুপ্ত বাসনা জন্মায় নৈহাটিতে যদি এমন বড় মূর্তির পুজো শুরু করা যায় কেমন হবে। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। সকলে মিলে হই হই করে সেবার কালীপুজোয় তৈরি করলেন বিশাল এক কালীমূর্তি। সেই কালীপ্রতিমার উচ্চতা হয়েছিল ২১ ফুট। ফলে গোটা নৈহাটির মানুষ সেই বিশাল কালী প্রতিমা দেখতে ভিড় করেন। লোকমুখে তা ভবেশ কালী নামে পরিচিত হয় প্রথমদিকে। পরে ভবেশকালীর মাহাত্ম্য এবং অলৌকিকতা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। বড় মূর্তির জন্যই এই কালীর নাম বড় মা হয়ে যায় কালান্তরে। যা নৈহাটি ছাড়িয়ে গোটা জেলা, রাজ্য, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
ফুলের সাজে নৈহাটির বড়মা
নৈহাটির বড় মায়ের কাঠামো পুজো হয় লক্ষ্ণীপুজোর দিন। এরপরই শুরু হয়ে যায় প্রতিমা নির্মানের কাজ। কালীপুজোর দিন মাকে সাজানো হয় সোনা এবং রুপোর গয়নায়। এ বছর মাকে সাজানো হবে ১০১ ভরি সোনার গহনায়। পাশাপাশি ২০০ ভরির কাছাকাছি রুপোর গয়নাও থাকবে বড়মার সাজে। মন্দির কমিটির কথায়, অত্যন্ত জাগ্রত এই দেবীর নিকট যারাই মানসিক বা মানত করেন সেটাই পুরণ হয়। তাই বছর বছর প্রচুর সোনা বা রুপোর গয়না বড়মার কাছে দান আসে। সেটা দিয়েই প্রতি বছর বড়মার জন্য নতুন গয়না গড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে বছর বছর বড়মার গয়না বাড়ছে। গত বছর বড়মার নতুন মন্দির নির্মান হয়েছে। সেখানে একটি কষ্টিপাথরের ভব্য মূর্তিও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু কালীপুজোর সময় ২১ ফুটের প্রতিমা নির্মান করেই পুজো হয়। নৈহাটির বড়মার বিসর্জনের রীতিও বেশ চিত্তাকর্ষক। ওই দিন ফুলের সাজে সাজানো হয় বড় মাকে। এরপর কাঠামোর নিচে লাগানো বিশেষ চাকা লাগানো ট্রলিতে তুলে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় গঙ্গার ঘাটে। সেখানেই হয় প্রতিমা নিরঞ্জন। যা দেখতে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন গঙ্গার ঘাটে।
Discussion about this post