ধর্ম কেউ মানেন কেউ বা নয়। কেউ ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রাখেন। কেউ বা না। আপাত দৃষ্টিতে ধর্ম মানা বা না মানা পুরোটাই ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু সেই ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে যদি কোন রাজনৈতিক দলের নাম জড়িয়ে যায়। কোন একটি নির্দিষ্ট দলকে নাস্তিকের দল বলে চিহ্নিত করা হয়। হ্যাঁ আমরা কমিউনিস্টদের কথা বলছি। ধর্ম নয় কর্মে তাঁরা বিশ্বাসী। সম্প্রতি ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করলেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সোমবার ছিল রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ১১১ তম জন্মদিবস। সেখানে মহম্মদ সেলিম ধর্ম নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। “জ্যোতিবাবুর বাবা – মা ছিলেন ধার্মিক। জ্যোতি বাবুর বাবা ছিলেন বাবা লোকনাথের ভক্ত। জ্যোতিবাবু বহুবার বলেছেন তিনি নিজে ধর্ম না মানলেও প্রসাদ খেতেন “।
অর্থাৎ সেলিমের মন্তব্য থেকে পরিষ্কার ধর্ম যার যার বিষয়। কেউ মানেন কেউ নয়। তবে যে মানেন তার ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক পরিচয় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সব ধর্ম ও তার আচার আচরণ কে সম্মান দেওয়া বাঞ্ছনীয়। সেলিমের এই বক্তব্য ঘিরে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি এটিকে দিশাহীন প্রলাপ বলে দাবি করেন। উদাহরণ হিসেবে কুণাল বলেন আগে সিপিআইএম দুর্গা পুজোর মণ্ডপ থেকে দূরে গিয়ে মার্কসবাদী স্টল দিত। মণ্ডপে যেত না। এখন মণ্ডপে ও যান। স্টল ও দেন। এখন প্রশ্ন উঠছে তবে কেন ধর্মীয় উন্নাসিকতা ছাড়ার বার্তা দিলেন সেলিম ? রাজনীতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছে ২০১৬ সাল থেকে বামেদের ভোট তাৎপর্য পূর্ণ ভাবে কমেছে রাজ্যে। পাল্টা বিজেপির ভোট বেড়েছে।
অর্থাৎ বামের ভোট গিয়েছে রামে। বিজেপি সম্পূর্ণ ভাবে একটি ধর্মে আস্থাশীল দল। ভোট বাক্স বদল হওয়া একাংশ ধর্মের প্রতি আস্থা শীল হয়ে উঠেছে। তাই কোন ধর্ম ও তার আচার আচরণের প্রতি রাজনীতিক দলের আচরণ ও পরিবর্তন হওয়া দরকার। বলাবাহুল্য ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে আগেও দলে দ্বন্দ্ব দেখা গিয়েছে। একসময় সুভাষ চক্রবর্তীর তারাপীঠ এ পুজো দেওয়া নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। সেই সময় জ্যোতি বসু বলেছিলেন সুভাষের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। ওকে মৃত্যু ভয় পেয়েছে। রেজ্জাক মোল্লার হজ যাত্রা নিয়েও দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছিল। ধর্ম মানা বা না মানা নিয়ে খোদ দলের অন্দরে দড়ি টানাটানি রয়েছে। এই দ্বন্দ্ব মেটানোর প্রয়োজন রয়েছে। কমিউনিস্টদের ধর্ম মানা বা না মানা নিয়ে ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যে কটাক্ষ টাকে জবাব দেওয়ার সময় এসেছে।
Discussion about this post