আমরা সকলেই জানি যে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি, বা কলকাতা হল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী। আসলে কোনও দেশ হোক বা রাজ্য, প্রত্যেকের একটি করে রাজধানী শহর রয়েছে। এই রাজধানী থেকেই প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা করা হয়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী-সহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের দফতর থাকে, পুলিশ হেডকোয়ার্টার থাকে। এছাড়া প্রতিটি দফতর বা কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির দফতরও থাকে। যাতে সুষ্ঠভাবে সবকিছু এক জায়গায় পাওয়া যায়। কিন্তু ভারতের একটিমাত্র রাজ্য রাজধানী ছাড়াই চলছে দীর্ঘদিন ধরে। কোন রাজ্য, কেন নেই রাজধানী সেই উত্তর খোঁজার আগেই বলে রাথি এর পিছনে রয়েছে প্রাদেশিক রাজনীতির কুরুচিকর দিক।
২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে দুটি রাজ্য তৈরি হয়েছিল। একটি অন্ধ্রপ্রদেশ নামেই থেকে যায়, অন্যটির নাম হয় তেলেঙ্গানা। অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী ছিল হায়দরাবাদ। ফলে নতুন রাজ্য তেলেঙ্গানার রাজধানী কি হবে সেটা তখনও ঠিক হয়নি। যদিও রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঠিক হয়েছিল পরবর্তী ১০ বছরের জন্য অন্ধ্র এবং তেলেঙ্গানা দুটি রাজ্যের রাজধানী হায়দরাবাদ থাকবে। যদিও অন্ধ্রপ্রদেশের অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে ভেলগাপুরী শহরকে প্রাথমিকভাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। অন্ধ্রের তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ঠিক করেন নতুন রাজধানী শহর তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকেই অস্থায়ীভাবে কাজকর্ম চলবে। এরপর কেটে গিয়েছে দশ বছর। তবুও অন্ধ্রপ্রদেশ নতুন রাজধানী শহর তৈরি করতে পারেনি। অন্ধ্র এবং তেলেঙ্গানার দশ বছরের যৌথ রাজধানী হায়দরাবাদের ডেডলাইন শেষ হয়েছে চলতি বছরের ২ জুন। ফলে এখন প্রকৃত অর্থে অন্ধ্রপ্রদেশের স্থায়ী-অস্থায়ী কোনও রাজধানী নেই।
একটি রাজ্যের রাজধানী থাকা অত্যন্ত জরুরী। কারণ এখান থেকে রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা করা হয়। এখানেই থাকে সেই রাজ্যের আইনসভা, প্রধান নির্বাহী অফিস এবং হাইকোর্ট। শাসনের এই কেন্দ্রীকরণ দক্ষ প্রশাসন, নীতি প্রণয়ন এবং জনসেবামূলক কাজকর্মকে সহজতর করে। আবার কোনও রাজ্যের রাজধানী সেই রাজ্যের পরিচয় এবং ঐতিহ্যের প্রতীক হতেও দেখা যায়। ফলে কোনও রাজ্যের রাজধানী খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখন প্রশ্ন হল, অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী এখনও তৈরি হল না কেন।
অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা ভাগ হওয়ার সময় অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু। তিনি চেয়েছিলেন কৃষ্ণা নদীর তীরে অমরাবতীকেই অন্ধের নতুন রাজধানী স্থাপন করা হবে। এই অমরাবতী অন্ধ্রপ্রদেশের কেন্দ্রস্থলে গুণ্টুর জেলায় অবস্থিত। চন্দ্রবাবু নাইডু চেয়েছিলেন এই অমরাবতী ভারতের সবচেয়ে সুন্দর এবং হাইটেক শহর হবে। এরজন্য তিনি ২০১৫ সালে সিঙ্গাপুরের এক বিখ্যাত রিয়েল এস্টেট সংস্থার সঙ্গে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার চুক্তি করেন। এর জন্য তৎকালীন অন্ধ্র সরকার কৃষকদের থেকে প্রায় ৩৩ হাজার একর জমি অধিগ্রহন করেছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালে চন্দ্রবাবু নাইডু সরকারের পতন হয়। অন্ধ্রে ক্ষমতায় আসে ওয়াইএসআর পার্টি। অন্ধের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হন ওয়াই এস জগনমোহন রেড্ডি। আর ক্ষমতায় এসেই তিনি চন্দ্রবাবু নাইডুর সমস্ত প্রকল্প হয় স্থগিত করে দেন, না হলে বরাদ্দ কমিয়ে দেন। এই টানাপোড়েনে সিঙ্গাপুরের ওই সংস্থা প্রকল্পটি ছেড়ে চলে যায়। আর অমরাবতী প্রকল্প অথৈ জলে পড়ে।
অপরদিকে জগনমোহন রেড্ডি চাইছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের তিনটি রাজধানী করতে। যা নিয়ে প্রচুর জলঘোলা হয় এবং শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের দরজায় পৌঁছয়। ফলে এই পরিকল্পনাও এখন হিমঘরে চলে গিয়েছে। এই টানাপোড়েনের ফলে দশ বছর অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ এখনও রাজধানীহীন হয়েই রয়ে গিয়েছে। যদিও, ২০২৪ সালে অন্ধে ফের ক্ষমতায় এসেছে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি। আর ক্ষমতায় এসেই তিনি ঘোষণা করেছেন, অদূর ভবিষ্যতে অমরাবতীই হবে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী। এবং তা হবে দেশের সবচেয়ে হাইকেট সিটি। এখন দেখার সেই শহর কবে মাথা তুলে দাঁড়ায় এবং অন্ধ্রপ্রদেশ তাঁর নিজস্ব রাজধানী পায়।
Discussion about this post