ভারতের সংবিধান অনুযায়ী কোনও অজুহাতে বা কোনও মামলায় অভিযুক্ত হয়ে যদি কেউ জেলে থাকেন, তবে তিনি ভোট দিতে পারবেন না। কিন্তু ভোটে লড়তে পারেন। সেই নিয়মের ফাঁকেই এবার ভোটে লড়েছিলেন দুই বন্দি। একজন হলেন পঞ্জাবের অমৃতপাল সিংহ এবং অন্যজন হলেন কাশ্মীরের শেখ আব্দুল রশিদ। দুজনেই নিজের কেন্দ্র থেকে এবার ভোটে জিতেছেন। এখন প্রশ্ন হল, তাঁরা কী সাংসদ হিসেবে লোকসভায় গিয়ে শপথ নিতে পারবেন? তাঁদের রাজনৈতিক ভবিষ্যষ্যৎই বা কী? আসুন জেনে নেওয়া যাক এ ক্ষেত্রে কি বলছে ভারতের আইন।
দুটি গুরুতর অভিযোগের ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল পঞ্জাবের মোগা থেকে গ্রেফতার করাহয়েছিল অমৃতপাল সিংকে। তিনি ‘ওয়ারিশ পঞ্জাব দে’ নামে এক নিষিদ্ধ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের প্রধান। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে পঞ্জাবের এক থানায় হামলা চালানো এবং ওই সংগঠনের নেতাদের ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর পর থেকে বেশ কিছু দিন ফেরার ছিলেন অমৃৎপল। জাতীয় সুরক্ষা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলায় অমৃৎপালকে গ্রেফতার করে এনএসএ। বর্তমানে তিনি অসমের ডিব্রুগড়ের একটি জেলে বন্দি। ২৪-এর লোকসভা ভোটে ডিব্রুগড়ের জেল থেকেই অমৃতপাল পঞ্জাবের খাদুর সাহিব আসন থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়েন। আদালতের অনুমতি নিয়েই মনোনয়ন পেশ করেছিলেন এই খালিস্তানি নেতা। ভোটের ফল বের হওয়ার পর দেখা যায় অমৃতপাল সিং জিতে গিয়েছেন। তিনি কংগ্রেস প্রার্থীকে হারিয়েছেন প্রায় ২ লক্ষ ভোটে।
অপরদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুলা আসন থেকে জিতেছেন নির্দল প্রার্থী আব্দুল রশিদ। তাঁকে অনেকে ইঞ্জিনিয়ার রশিদ বলেও চেনেন। জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য করার মামলায় তিনি ২০১৯ সালের ৯ অগস্ট থেকে তিহাড় জেলে বন্দি। তাঁর বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে। সেই আব্দুল রশিদ কাশ্মীরের বারামুলা লোকসভা কেন্দ্র থেকে এবার জিতেছেন দুই লক্ষের বেশি ব্যবধানে।
এখন প্রশ্ন হল, তাঁরা কি সাংসদ হিসেবে শপথ নিতে পারবেন? আইন বলছে, এই দুই জেলবন্দি বিজয়ী প্রার্থী তাঁদের লোকসভা ভোটে জয়ের শংসাপত্র সহ জেল কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ অনুমতি চাইবেন। এরপর জেল কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে সংসদে গিয়ে শপথ নিতে পারবেন বিজয়ী প্রার্থীরা। তারপর ফিরতে হবে সেই জেলেই। এমনকি তাঁরা যে সংসদ ভবনে উপস্থিত থাকতে পারবেন না, এবং কি কারণে অনুপস্থিত থাকবেন তা লোকসভার স্পিকারকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। এরপর স্পিকার ভোটাভুটির মাধ্যমে স্থির করবেন, তাঁরা সাংসদ সদস্য থাকতে পারেন কি না। ফলে দুই জেলবন্দি বিজয়ী প্রার্থীর ভাগ্য এখনই ঠিক হচ্ছে না। এর জন্য তাঁদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
Discussion about this post