প্রতি বছরই কালীপুজোর দুইদিন আগে পালন করা হয় ধনতেরস উৎসব। যদিও এই উৎসব মূলত অবাঙালিদের মধ্যেই প্রচলিত ছিল, কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে এটি বাঙালিদের মধ্যেও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মানুষের বিশ্বাস, এই ধনতেরাসের দিন সোনা-রুপো বা কোনও ধাতুর সামগ্রী কেনা অত্যন্ত শুভ। আরও একটি জিনিস কেনার প্রচলন আছে, সেটি হল ঝাড়ু। আসুন এক ঝলকে জেনে নেওয়া যাক, এই ধনতেরস আসলে কি, আর কেনই বা সোনা-রুপো বা ঝাড়ুর কেনার প্রচলন রয়েছে এই বিশেষ দিনে।
আগেই বলেছি কালীপুজোর দুইদিন আগে ধনতেরস পালিত হয়। কালীপুজোর আগের দিন হল কৃষ্ণা চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশী। তার আগের দিন অর্থাৎ আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে ধনতেরস পালিত হয়। সংস্কৃতে ধন্বন্তরী ত্রয়োদশী শব্দ থেকেই ধনতেরস এসেছে বলে অনেকে মনে করেন। এই দিনটি আসলে ধন্বন্তরীর পুজো করা হয়। হিন্দু ধর্মের মতে, ধন্বন্তরী হলেন বিষ্ণুর এক অবতার, তিনি দেবতাদের চিকিৎসক। কথিত আছে, সমুদ্র মন্থনকালে আবির্ভূত হন। তাঁর এক হাতে অমূতকলস এবং অন্যহাতে আয়ুর্বেদশাস্ত্রের বই ছিল। আজও আমাদের বহু প্রতিথযশা চিকিৎসককে ধন্বন্তরী বলার চল আছে। ২০১৬ সালে ভারতের আয়ুর্বেদমন্ত্রক ধনতেরসের দিনটিকে জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। এবার আসি আসল কথায়।
হিন্দু শাস্ত্র মতে, এদিনই বিষ্ণুর থেকে লক্ষ্মীর কাছে শক্তি প্রবাহিত হয়। এই শক্তি সেখান থেকে গোটা সৃষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে দেন দেবী লক্ষ্মী। সেই থেকেই ধনতেরসের দিন সোনা-রুপো কেনার চল। কেনাকাটার জন্য বছরের সবচেয়ে শুভ দিন হিসেবে গণ্য করা হয় ধনতেরসকে। এদিন রুপোর বাসনপত্র কেনাও অত্যন্ত মঙ্গলজনক বলে মনে করা হয়। এছাড়া কেউ কেউ পেতলের বাসনও কিনে থাকেন। তবে নতুন বাসন কিনে ধনতেরসের দিন সেটি ঘরের পূর্ব দিকে রাখবেন। তবেই ঘরে সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে।
তবে ধনতেরসের দিন ঝাড়ু কেনাও অত্যন্ত শুভ হিসেবে ধরা হয়। ঝাড়ু কিনে ঘরে আনার অর্থ আপনি দারিদ্র্যকে ঘর থেকে বিদায় করছেন। তাই ধনতেরাসের দিন ঝাঁটা কেনা খুবই শুভ। ঝাড়ু এমন একটি উপাদান যা বাড়ির সমস্ত ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের কাজে লাগে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ, ঝাড়ু সমস্ত অশুভ শক্তিকে দূরে রাখে এবং ইতিবাচক শক্তির প্রাবল্য বৃদ্ধি করে। ঝাড়ুকে সংসারের ময়লা ও নেতিবাচকতা সরানোর প্রতীক হিসাবেও ধরা হয়। হিন্দু পঞ্জিকা মতে, ধনতেরসের সময়ে বিশেষভাবে ঝাড়ু কেনা শুভ ফল প্রদান করে এবং এটি পরিবারের জন্য উন্নতির পথ সুগম করে। পাশাপাশি, ধনতেরসের দিন ঝাড়ু কেনার মাধ্যমে পরিবারে ধনের আগমন ঘটে বলে মনে করা হয়। এই দিনে ঝাড়ু কিনলে পরিবারের সদস্যরা আর্থিকভাবে শক্তিশালী হন এবং ধন-সম্পদে ভরপুর থাকেন। বিশ্বাস, লক্ষ্মী নোংরা অপরিচ্ছন্নতা একদমই পছন্দ করেন না। তাই যে স্থান অপরিস্কার, সেখানে লক্ষ্মীর চরণ পড়ে না বলে মনে করা হয়। তাই ধনতেরসে লক্ষ্মীকে প্রীত করতেই ঝাড়ু বা ঝাঁটা কেনার চল রয়েছে।
Discussion about this post