ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে এই হ্রদ অবশ্যই বাকেট লিস্টে থাকে। বরফাকীর্ণ পাহাড়ের কোলে স্বচ্ছ-টলটলে জলের এই হ্রদের আকর্ষণ দূর-দূরান্তের পর্যটকদের টেনে আনে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হিমবাহ ফেটে ভয়াবহ ধস এবং মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত এখানে যাওয়ার রাস্তা। ফলে পর্যটকদের জন্য আপাতত বন্ধ জনপ্রিয় এই পর্যটনস্থলটি। আমরা কথা বলছি সিকিমের গুরুদংমার লেক নিয়ে। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন, এই গরমে যারা সিকিম বেড়াতে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য দুঃসংবাদ। খারাপ রাস্তা এবং আবহাওয়ার জন্য কোনও ঝুঁকি না নিয়ে সিকিম সরকার আপাতত বন্ধ রেখেছে গুরুদংমার লেক দর্শন। কিন্তু এই হ্রদ নিয়ে যে নানান কিংবদন্তি রয়েছে, এই ফাঁকে সেগুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। যাতে আগামীদিনে যারা গুরুদংমার বেড়াতে যাবেন, অসাধারণ প্রাকৃতিক নিস্বর্গের পাশাপাশি এই হ্রদের আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য এবং গল্পগাথা জানা থাকে।
বাঙালির কাছে এতদিন পাহাড় বলতে ছিল দার্জিলিং। কিন্তু ইদানিং সিকিমের জনপ্রিয়তা অনেকটা বেড়েছে। এর অন্যতম কারণ সিকিমের পর্যটন সার্কিটের আধিক্য। উত্তর সিকিম, পূর্ব সিকিম, দক্ষিণ সিকিমে একেকবার গিয়ে একেক ধরণের ভ্রমণ বৈচিত্র পেয়ে যাবেন। ঠিক যেমন সিকিমের মঙ্গান জেলার চিন-তিব্বত সীমান্ত লাগোয়া গুরুদংমার লেক। এটি বিশ্ব তথা ভারতের দ্বিতীয় উচ্চতম হ্রদ। উচ্চতা প্রায় ১৭,৮০০ ফুট। ফলে এত উচ্চতায় কোনও হ্রদ এমনিতেই এক অত্যাশ্চর্য ব্যাপার। পাশাপাশি এই উচ্চতায় ভ্রমণ করাও একটা অ্যাডভেঞ্চার। কারণ এখানে অক্সিজেনের অভাবের জেরে অনেক পর্যটকই পৌঁছতে পারেন না। তবে যারা গিয়েছেন, তাঁরাই জানেন এখানকার নৈসর্গিক দৃশ্য। নীল আকাশের ব্যকড্রপে তুষারশুভ্র পাহাড় শৃঙ্গের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে গুরুদংমার স্বচ্ছ জলে।
শুধু মাত্র গরমকালেই এই অঞ্চলে যাওয়ার ছাড়পত্র থাকে। গুরুদংমার হ্রদ যেতে গেলে সিকিমের পাহাড়ি গ্রাম লাচেনে একরাত থাকতে হয়। এখান থেকে গুরুদংমার লেক প্রায় ৪-৫ ঘণ্টার রাস্তা। কিন্তু শীত পড়লেই গুরুদংমারের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ শীতকালে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ২০ ডিগ্রি পর্যন্ত। তখন পুরু বরফের চাদরে ঢেকে যায় সবকিছু। কিন্তু মজার বিষয় হল, এত বরফ পড়লেও গুরুদংমার হ্রদের একটি অংশ কখনও জমাট বাঁধে না। জমে না বরফ। এর পিছনে রয়েছে একটা কিংবদন্তি।
সিকিমের স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, গুরুদংমার খুবই পবিত্র এক হ্রদ। বৌদ্ধ, শিখ এবং হিন্দুদের কাছে এই হ্রদ অত্যন্ত পবিত্র। বৌদ্ধ কিংবদন্তি অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে গুরুদংমার হ্রদে এসেছিলেন বৌদ্ধ মহাগুরু পদ্মসম্ভব, যিনি রিন-পো-চে নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি তিব্বত থেকে ফেরার পথে এই হ্রদের কাছে আসেন। সেই সময় গুরুদংমার সারা বছরই বরফে জমাট থাকতো। ফলে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে তিব্বতী মেশপালকরা পানীয় জলের জন্য হাহাকার করতেন। বৌদ্ধ মহাগুরু পদ্মসম্ভবকে কাছে পেয়ে তাঁরা এই সমস্যার কথা জানান। তিনি স্থানীয়দের এই কাতর আর্জি শুনে কষ্ট পেয়েছিলেন এবং গুরুদংমার হ্রদের কাছে গিয়ে একটি অংশে নিজের আঙ্গুল স্পর্শ করেন। কিংবদন্তি অনুসারে এর পর থেকে গুরুদংমার হ্রদের সেই অংশ আজও প্রবল শীতে বরফ জমাট বাঁধে না। ফলে এই হ্রদটি আজও বৌদ্ধদের কাছে অতি পবিত্র।
অপরদিকে, শিখ ধর্মাবলম্বীদের কাছেও অত্যন্ত পবিত্র গুরুদংমার হ্রদ। শিখদের বিশ্বাস, এক সময় এই হ্রদ পরিদর্শনে এসেছিলেন গুরু নানক। তিনি এখানে কিছুদিন তপস্যাও করেন। সেই বিশ্বাস থেকেই গুরুদংমার লেক শিখদের কাছে অতি পবিত্র তীর্থস্থান। ভারতীয় সেনাবাহিনীর শিখ রেজিমেন্ট গুরুদংমার লেকের পাশে একটি গুরুদ্বার তৈরি করেছে।
বাংলা সিনেমায় একটা দুরন্ত ডায়লগ রয়েছে, “এক ছোবলেই ছবি”। অনেকটা সেই ধরণের বেশ কয়েকটি যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করেছ ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা...
Read more
Discussion about this post