ভারতীয় সিনেমা শুধু মাত্র ভারতীয়দেরই প্রভাবিত করে না। বিদেশীদেরও আকর্ষিত করে, তার উদাহরণ হলেন ডেভিড ওয়ার্ণার, যিনি পুষ্পা সিনেমাটি দেখে এতটাই প্রভাবিত হয়েছেন যে মাঝে মাঝে অল্লু অর্জুনের অভিনয়ের নকল করে থাকেন, যা অল্লু অর্জুনকেও মুগ্ধ করেছে। এবার ভারতীয় ক্রকেটার নীতীশও মাঠেই কখনও অল্লু অর্জুন আবার কখনও প্রভাসের অভিনয় করে দেখিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছেন।২০১৮ সালে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের একটি অনুষ্ঠানে বিরাট এবং অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে নিজস্বী তুলেছিলেন নীতীশ। তখন তাঁর বয়স ১৫ বছর। সেই সময় তাঁর নাম সেভাবে পরিচিতি পায় নি। সেই বিরাটের হাত থেকেই পার্থে টেস্ট টুপি পেলেন নীতীশ। সাজঘরে দেখিয়েছেন ২০১৮ সালের নিজস্বীটি। তবে এখন তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তোলার জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন হাজার হাজার সমর্থকেরা। নীতীশের পরিবারও মেলবোর্ন টেস্টের আগে অনুষ্কার সঙ্গে ছবি তুলেছিল। শনিবার সেই পরিবারের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য দৌড়লেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং মাইকেল ভনের মতো ক্রিকেটারেরা।এবার সেই নীতীশ কুমার রেড্ডি স্বস্তি আনলেন ভারতীয় সাজঘরে। ক্রিকেটপ্রেমীদের মনোরঞ্জনেও খামতি রাখলেন না তরুণ অলরাউন্ডার। তাঁর শতরানের ইনিংস রোহিত শর্মাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। অর্ধশতরানের পর অল্লু অর্জুনের পুষ্পার মতো উচ্ছ্বাসে আরও কঠিন লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। প্যাট কামিন্সেরা বুঝতে পেরেছিলেন কিনা, জানা যায়নি। তবে শতরান পূর্ণ করার পর তামিল চলচ্চিত্রের আর এক নায়ক প্রভাসের বাহুবলীর কায়দায় নীতীশের উৎসব ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের উচ্ছ্বাস দ্বিগুণ করেছে। নীতীশের উৎসবের দুই মুহূর্তের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে।পুষ্পা এবং বাহুবলী — দু’টি জনপ্রিয় সিনেমার কায়দায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন নীতীশ। মেলবোর্ন টেস্টে ভারতীয় দল কোণঠাসা অবস্থা থেকে লড়াইয়ে ফিরেছে মূলত নীতীশের শতরানের ইনিংসেই ভর করে। তৃতীয় দিনের শেষে ২১ বছরের অলরাউন্ডার অপরাজিত রয়েছেন ১০৫ রান করে। তাঁর ১৭৬ বলের ইনিংসে রয়েছে ১০টি চার এবং ১টি ছক্কা। মাঠে নেমে অযথা ঝুঁকি নেননি। বল বুঝে খেলেছেন। প্রয়োজনে রক্ষণ করেছেন। আবার আগ্রাসীও হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের অযথা সমীহ করেননি। তাতেই পাল্টা লড়াই পৌঁছে দিতে পেরেছেন প্রতিপক্ষ শিবিরে।ব্যাট হাতে নীতীশের লড়াই যেমন ভারতীয় সাজঘরে স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করেছে, তেমনই তাঁর উচ্ছ্বাস প্রকাশের ধরন আলোড়ন তৈরি করেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। চাপের মুখে ৫০ রান করার পর নীতীশকে দেখা গিয়েছে পুষ্পার অল্লুর কায়দায়। বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন হার মেনে নেওয়ার পাত্র তিনি নন। মেলবোর্নের ২২ গজে ক্রমাগত জোরে বোলিং করে তাঁকে ভয় পাওয়ানো যাবে না। একই সঙ্গে আরও কঠোর লড়াইয়ের বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন কামিন্সদের শিবিরে।জনপ্রিয় তামিল সিনেমা পুষ্পার অতি পরিচিত মুদ্রা কামিন্সরা হয়তো বোঝেনি। বা বুঝলেও সুবিধা করতে পারেননি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন নীতীশ। পুষ্পা থেকে বিদেশের মাটিতে হয়ে উঠেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের বাহুবলী। শতরান পূর্ণ করার উচ্ছ্বাসে তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন নীতীশ। সেই বার্তা হয়তো বুঝবেন কামিন্সরা। দিনের খেলার শেষে হোটেলে ফিরে বুঝতে পারবেন নীতীশের জোড়া উচ্ছ্বাস প্রকাশের অর্থ। তাঁরা বুঝবেন পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর।অন্ধ্রপ্রদেশের ক্রিকেটার নীতীশ সময় পেলেই সিনেমা দেখেন। দক্ষিণী সিনেমার ভক্ত তিনি। পুষ্পা বা বাহুবলীতে অল্লু এবং প্রভাসের মুদ্রার অর্থ তাঁর অজানা নয়। তাই অর্থশতরান এবং শতরান পূর্ণ করার পর সেই মুদ্রাই ব্যবহার করেছেন তিনি। দলকে স্বস্তি দেওয়ার পর ক্রিকেটপ্রেমীদের অতিরিক্ত মনোরঞ্জন করেছেন তরুণ ক্রিকেটার। তাঁর মাধ্যমেই মেলবোর্নে হাজির হয়েছেন দুই জনপ্রিয় অভিনেতা।নীতীশ যে লড়াকু তা প্রথম টেস্টেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। পার্থে ভারতীয় প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে শেষ হয়ে যায়। তার মধ্যে ৪১ রান করেছিলেন নীতীশ। তাঁর সেই ৫৯ বলের ইনিংসই বুঝিয়ে দিয়েছিল সহজে ছাড়ার পাত্র নন তিনি। অ্যাডিলেডে আবার মিচেল স্টার্কের ৬ উইকেট নেওয়াকে ছাপিয়ে ভারত-অস্ট্রেলিয়া দিন-রাতের টেস্টের প্রথম দিনের শেষে আলোচনায় উঠে এসেছিল নীতীশের ছক্কা। তাঁর হাতে ছক্কা খেয়ে এক রকম বাক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন স্কট বোল্যান্ড। ভারতের ইনিংসের ৪২তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি খারাপ করেননি বোল্যান্ড। অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে বল রেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জোরে বোলার। নীতীশ দ্রুত নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে পয়েন্ট এবং গালির মাঝামাঝি অংশ দিয়ে রিভার্স স্কুপে বল পাঠিয়ে দেন মাঠের বাইরে। নীতীশের এই শট দেখে হেসে ফেলেন ২২ গজের অন্য প্রান্তে থাকা যশপ্রীত বুমরা। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। এক রকম হতভম্ব হয়ে যান বোল্যান্ড।নীতীশকে টেস্ট দলে নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছিল অনেক । আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে এই বছরের শুরুতে নজর কেড়েছিলেন তিনি। কিন্তু আইপিএল আর টেস্ট ক্রিকেট তো এক নয়। সাদা বলের ক্রিকেটে সাফল্য পাওয়া অলরাউন্ডার কি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে লাল বলের ক্রিকেটে পারবেন? পরিস্থিতি যে কঠিন তা জানতেন নীতীশও। কিন্তু কোচ গৌতম গম্ভীরের একটা কথা অনুপ্রেরণা হিসাবে নিয়েছিলেন তিনি। নীতীশ বলেছেন, “কোচ বলছিলেন, ‘যদি কেউ বাউন্সার দেয় তা হলে সেই বল কাঁধ দিয়ে আটকাও। মনে করো দেশের জন্য একটা গুলি হজম করছ’। ওই কথাটাই আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। উনি বিশ্বাস করেছেন যে দেশের জন্য আমি গুলি খেতে পারি। গৌতম স্যরের থেকে শোনা এই কথাটাই সবচেয়ে ভাল লেগেছে।”পার্থ টেস্ট শুরুর এক দিন আগেই নিজের অভিষেকের কথা জানতে পেরেছিলেন নীতীশ। নিজেকে শান্ত রেখেছিলেন ম্যাচের আগে। বিকেলে সাইকেল চালিয়েছেন। তার পর ঠান্ডা মাথায় নৈশভোজ করেছিলেন। নীতীশের কথায়, “হর্ষিত (রানা) এবং আমাকে অভিষেকের কথা এক দিন আগে জানানো হয়েছিল। আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তবু রাতের খাবার খাওয়ার সময় চুপচাপ ছিলাম। খুব বেশি চাপ নিতে চাইনি। বিকেলে একসঙ্গে সাইকেল চালিয়েছি। বেশ ভাল লেগেছে।” এক সময় ফলো-অন বাঁচানোর কথা ভাবতে হচ্ছিল ভারতকে। সেখান থেকে পাল্টা লড়াই করার কথা ভাবতেই পারেন রোহিতেরা।
আর একদিন পরই আমরা পৌঁছে যাব আরও একটি নতুন বছরে। তাই ফেলে আসা বছরের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে কখনও সুখের...
Read more
Discussion about this post