গরু পাচার মামলায় একের পর এক জামিন পেয়েছেন অভিযুক্তরা। আদালতের কাছে যাদের বারবার প্রভাবশালী বলে উল্লেখ করে জামিন আটকানোর চেষ্টা করেছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি, গরু পাচার মামলায় প্রথমে অনুব্রত মণ্ডলের সিএ মনীশ কোঠারি, তারপর অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা, তারপর স্বয়ং অনুব্রত মণ্ডল। এবার জামিন পেলেন গরু পাচার মামলার মূল অভিযুক্ত এনামুল হক। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, গরু পাচারের মতো চাঞ্চল্যকর মামলায় সকল অভিযুক্তরা কীভাবে একে একে জামিন পেয়ে গেলেন? তাও আবার নিম্ন আদালতে। যেখানে সিবিআই ও ইডি নিয়মমাফিক গরু পাচার মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছিল। এর পরেও সকলে জামিন পেয়ে যাচ্ছেন কী ভাবে? এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে উঠে আসছে এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। সেই সঙ্গে রয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি, সিবিআই ও ইডি-র ঢিলেমির তত্ত্ব।
গত শুক্রবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট জামিন দিয়েছে বীরভূমের দোর্দন্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা তথা বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। তাঁর আইনজীবীর দাবি, গরু পাচার মামলায় মোট চারটি চার্জশিট দাখিল করেছিল। কিন্তু কোনও চার্জশিটেই অনুব্রত মণ্ডল গরু পাচার থেকে সরাসরি আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন, এমন কিছুর উল্লেখ নেই। তাই জামিন পেয়ে গেলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি। এটা যেমন একটা দিক, তেমনই রয়েছে আরও একটি কারণ। সেটা হল অনুব্রত মণ্ডলের শিক্ষাগত যোগ্যতা। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। আগে জেনে নেওয়া যাক বিচারের এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণ কী?
কেন বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে এত দেরি হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেটা হল বাংলা ভাষা। এই বাংলা ভাষার গেরোতেই বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে গরু পাচার মামলার বিচার প্রক্রিয়া। আর এই বাংলা ভাষার গেরোতেই গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তরা পরপর জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। কোনও ভাবেই জামিন আটকাতে পারছে না ইডি অথবা সিবিআই। ভাবছেন তো এটা আবার কেমন গোরো? জানা যাচ্ছে, গরু পাচার মামলায় অনুব্রত-সহ যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগই বাংলা ছাড়া অন্য কোনও ভাষা জানেন না, বলতে বা লিখতে পারেন না। ফলে তাঁদের সমস্ত বয়ান বাংলা ভাষাতেই রেকর্ড করতে হয়েছে ইডি ও সিবিআইকে। আবার পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যাদের সাক্ষী হিসেবে রেখেছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি, তাঁরাও বাংলা ছাড়া অন্য কোনও ভাষায় বয়ান নথিভূক্ত করাতে পারেননি। ফলে হাজার হাজার পাতার বয়ান বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে কালঘাম ছুটছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির।
সূত্রের খবর, বাংলা ভাষা থেকে বয়ানের কপি ইংরেজিতে অনুবাদ এখনও শেষ হয়নি বলেই সূত্রের খবর। তাই মূল মামলার ট্রায়াল এখনও শুরু করা যায়নি। সমস্যা তৈরি হচ্ছে আরও একটি জায়গায়। দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের বিচারক বা আইনজীবী কেউই বাংলা জানেন না অথবা বোঝেন না। ফলে অভিযুক্ত এবং সাক্ষীদের বয়ান বুঝতে অথবা জিজ্ঞাসাবাদ করতে চরম সমস্যায় পড়ছেন বিচারক এবং আইনজীবীরা। অনুব্রত মণ্ডল আবার লিখতে এবং সাক্ষর করতেও পারেন না। ফলে তাঁকে যতবার জেরা করা হয়েছে, ততবারই ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। সেই রেকর্ড দেখে বয়ান নথিভূক্ত করতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। যেটাও একটা সময়সাপেক্ষ কাজ। যার ফলে গরু পাচার মামলায় চরম সমস্যায় পড়েছে কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আর এই বাংলা ভাষার গেরোতেই একে একে জামিন পেয়ে গেলেন মনীশ কোঠারি, অনুব্রত মণ্ডল, সুকন্যা, এনামুল হকরা।
Discussion about this post