সেই জুলাই মাসে বাংলাদেশে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তাতেই উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা বাংলাদেশ। সেই সময় ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশের ঢাকাগামী আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস আটকে গিয়েছিলো বিক্ষোভের জেরে। এরপর ভারতের রেল মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী সবকটি আন্তর্জাতিক ট্রেন অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল থাকবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তবেই চলবে ট্রেনগুলি। কিন্তু বাংলাদেশে পালাবদলের পরও বদলায়নি পরিস্থিতি, আজও চালু হয়নি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক ট্রেন চলাচল করে। প্রথমটি কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস, যা নদিয়ার গেদে সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করে। দ্বিতীয়টি কলকাতা ও খুলনার মধ্যে বন্ধন এক্সপ্রেস, যা বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করে। আর তৃতীয়টি উত্তরবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকার মধ্যে মিতালি এক্সপ্রেস, যা চিলাহাটি সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করে। তিনটে ট্রেনই বিগত তিনমাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ফের কবে এই পরিষেবা চালু হবে তা ঘিরে তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চিয়তা।
ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, বাংলাদেশে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার পর ভারতই প্রথম ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধের পক্ষপাতী ছিল। কিন্তু এখন ভারত এই রেল চলাচল শুরুর বিষয়ে উদ্যোগী হলেও বাংলাদেশের তদারকি সরকার কিছুটা ‘বেঁকে’ বসেছে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের দাবি, এর পিছনে ভারতের বর্তমান ভিসা নীতি দায়ী। প্রসঙ্গত, পালাবদলের পর ভারত বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা দিলেও তা নিয়ে কড়াকড়ি বজায় রেখেছে। এখন বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতির বদল করেছে ভারত। শুধুমাত্র জরুরি ভিত্তিতে ‘মেডিক্যাল ভিসা’ দেওয়া হচ্ছে বলেই দাবি। তাই এই মুহূর্তে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু হলে পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যাবে না বলেই মনে করছেন সে দেশের রেলকর্তারা। কূটনৈতিক মহলের মতে, বাংলাদেশের তদারকি সরকার ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই ট্রেন চলুর ব্যাপারে গ্রিন সিগন্যাল দিচ্ছে না।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনুষের নেতৃত্বে তদারকি সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক অনেকটাই তলানিতে ঠেকেছে। বিশেষ করে সে দেশে বসবাসকারী হিন্দুদের ওপর লাগাতার হামলার ঘটনা নিয়ে ভারত সরকার বারবার অসন্তোষ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি যশোরেশরী মন্দিরে নরেন্দ্র মোদির উপহার দেওয়া সোনার মুকুট চুরি যাওয়া নিয়েও ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশন কড়া বিবৃতি দিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন আরও বেড়েছে। অপরদিকে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরে বাংলাদেশে বাড়ছে ভারত বিরোধিতার সুর। এই অবহে ভারত ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি গ্রহণ করেছে বলে সূত্রের খবর। যদিও বাংলাদেশকে ডিম, পেঁয়াজ এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রফতানি শুরু করেছে ভারত। কিন্তু ভিসা নীতিতে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় বিমান ও বাস পরিষেবাও সীমিত হয়ে গিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা করাতে আসা বাংলাদেশিরা পড়েছেন বিপাকে। তাই দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল কবে শুরু হবে, তা এখন বিশ বাও জলে।
Discussion about this post