জুনিয়র চিকিৎসকদের ১০ দফা দাবির পাল্টা ১৩ দফা দাবিপত্র প্রকাশ করেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। এরপরই আর জি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ ডঃ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার রাতে একান্ত বৈঠক করলেন কুণাল ঘোষের সঙ্গে। অত্যন্ত গোপনীয়তা রেখেই এক সংবাদপত্র অফিসে বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা ফাঁস হয়ে যায়। এরপরই সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে এদিনের বৈঠক নিয়ে চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তিনি কথা বললেন, এটা তারই সংকেত। যা নিয়ে বুধবার রাত থেকেই রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হতে শুরু করেছে।
আর জি কর কাণ্ডের আবহে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন দু-সপ্তাহ গড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যখন শাসকদলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ প্রায়ই সাংবাদিক বৈঠকে ডাক্তারদের এই আন্দোলনকে তুলোধনা করছেন। ঠিক তখনই অযাচিত হয়ে চিকিৎসকদের পক্ষ নিয়ে ডঃ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করলেন কুণাল ঘোষের সঙ্গে। তাঁদের দুজনের একান্ত বৈঠকে যে আর জি কর ইস্যু, ডাক্তারদের আন্দোলন, জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবির প্রসঙ্গ ছিল সেটাও স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা এই বৈঠককে কোনও ভাবেই মান্যতা দিতে নারাজ। আবার সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশও এই বৈঠককে নারায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত বিষয় বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। শুক্রবার সকালেই জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস এক প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, ডঃ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে “জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসক এবং জনগণএর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের দৌতের অধিকার কেউ দেয়নি”। চিকিৎসকদের এই সংগঠন সাফ জানিয়ে দেয় নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আচনরণকে তাঁরা সমর্থন করছেন না। অপরদিকে চিকিৎসকদের আরেক সংগঠন ফেডারেশন অফ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ডঃ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের প্রতিনিধি নয়। আর এই বৈঠককেও তাঁরা সমর্থন করছে না। সবমিলিয়ে আর জি কর আন্দোলনের মুখ হতে চেয়ে আসরে নামা ডঃ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগ কার্যত মাঠে মারা গেল।
বৃহস্পতিবার রাতে কুণাল ঘোষের সঙ্গে বৈঠকে কি কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা অবশ্য প্রকাশ্যে বলেননি কোনও পক্ষই। তবে প্রথম দিকে ডঃ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তিগত বৈঠক বলে এড়িয়ে গেলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে ঠারেঠরে স্বীকার করেছেন, আর জি কর কাণ্ড নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের পর তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ অবশ্য কোনও রাখঢাক না রেখেই বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই মাধাবী ছেলেমেয়েদের অনশন অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। যারা মানবিক দিক থেকে আলোচনা চাইছেন তাঁদের আমি সবসময়ই স্বাগত জানাবো। ডঃ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই চিন্তাভাবনা থেকেই এসেছিলেন। নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় সিনিয়র চিকিৎসক হিসেবে এর আগে বেশ কয়েকবার জুনিয়র ডাক্তারদের সমর্থনে সরব হয়েছিলেন। এমনকি আন্দোলনকারীদের হয়ে তিনি প্রথমসারিতেই ছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের মুখপাত্রের সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর তাঁর ভূমিকা নিয়েই উঠে গেল প্রশ্ন। বৃহস্পতিবার রাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি এক ভিডিও পোস্ট করেন। পরে একটি আলাদা পোস্টও লেখেন। তাতে তিনি বারবার দাবি করেছেন, “জুনিয়র ডাক্তারদের ভালোর জন্য যা করার করেছি। আমি প্রথমে মানুষ, তারপর ডাক্তার, তারপর আমার রাজনৈতিক সত্ত্বা”। ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিওতেও তিনি দাবি করেন, ওই বৈঠক তিনি করেছেন, শাসকদলের অবস্থানটা জানার জন্য।
বৃহস্পতিবার রাতের বৈঠকের পর কুণাল ঘোষ দাবি করেছিলেন, জুনিয়র ডাক্তারদের কোনও কোনও রাজনৈতিক দল দাবার বোরে হিসেবে ব্যবহার করছে। গভীর রাতে ফেসবুক ভিডিওতেও ডঃ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও একই কথা শোনা গেল। এখানেই উঠছে প্রশ্ন। তবে কি জুনিয়র ডাক্তারদের এই আন্দোলন ও অনশনকে নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে অন্য মোড় দেওয়ার চেষ্টা করছে শাসকদল? আর সেই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবেই এই বৈঠক হল? রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন তোলার ফর্মুলা খোঁজার সলতে পাকানো শুরু হল এই বৈঠক থেকেই। যদিও আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা অথবা সিনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন প্রকাশ্যেই বিবৃতি জারি করে ডঃ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কুণাল ঘোষের এই বৈঠককে খারিজ করে দিয়েছে।
Discussion about this post