প্রয়াত বরিষ্ঠ সঞ্চালক তথা অভিনেতা দেবরাজ রায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। চলচ্চিত্র জগতে আরও এক নক্ষত্র পতন। শোকের ছায়া নেমে এসেছে তাঁর পরিবার-সহ গোটা বাংলার বিনোদন এবং সংবাদ পরিবেশক জগতে।
কে ছিলেন দেবরাজ রায়?
দেবরাজ রায় ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক বলিষ্ঠ অভিনেতা। তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ৯ ডিসেম্বর ১৯৫৪ সালে। তার স্ত্রীর নাম অনুরাধা রায়। বলিষ্ঠ সংবাদ পাঠক হিসেবেই তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন দূরদর্শনের সংবাদ পাঠক হিসেবে। কর্মজীবনের প্রথম সময় দূরদর্শনে তার সংবাদ পাঠ এর ভঙ্গী বাঙালি হৃদয়কে মুগ্ধ করেছিল। টেলিভিশনের প্রথম যুগে তার সুদর্শন রূপ ও সুমধুর কন্ঠের সংবাদ পাঠ বাঙালির মনের মণিকোঠায় আজও জ্বলজ্বল করছে। ১৯৭০ সালে সঞ্চালক-অভিনেতার চলচ্চিত্র জগতে প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে সত্যজিত রায়ের “প্রতিদ্বন্দ্বী” ছবির মাধ্যমে। তবে এই ছবিতে তিনি মুখ্য নয় বরং পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান। শ্রুতি নাটকেও তিনি দর্শকের হৃদয় হরণ করেছিলেন। শ্রুতি নাটকের মঞ্চেও তার খ্যাতি ছিল সর্বাধিক।
দেবরাজ রায় মৃণাল সেন পরিচালিত ‘কলকাতা ৭১ সিনেমায় নজরকারা অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেছিলেন। এরপর পরবর্তী সময় তরুণ মজুমদার, তপন সিংহ এমন একাধিক নামজাদা পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। দেবরাজ রায় চলচ্চিত্র জগতে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিলেন দীনেন গুপ্ত পরিচালিত ‘মর্জিনা আবদুল্লা ‘ ছবির মাধ্যমে। সেই ছবিতে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। তারপর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এই ছবি চলচ্চিত্র জগতে তার কর্মজীবনে এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল। ১৯৭০ সালের তরুণ তুর্কি দেবরাজ রায়ের সামনের পথকে সুগম ও সুদীর্ঘ করেছিলো তার করা এই ছবি।
প্রয়াত অভিনেতা দেবরাজ রায়ের প্রথম সহ অভিনেতা ধৃতিমান বললেন ‘‘সাল ১৯৭০। আমরা তখন নতুন। দেবরাজ আর আমি মানিকদার ছবিতে অভিনয় করলাম। তখনই বুঝেছিলাম, ও অনেক দিন থাকতে এসেছে।’’দেবরাজের কণ্ঠ অন্যদের মতো ধৃতিমানেরও পছন্দের। ওঁর কথায়, ‘‘এটা বাড়তি আকর্ষণের জায়গা। সুপুরুষ, সুকণ্ঠের অধিকারী কম জনই হন। ওর সেটা ছিল।’’ এই প্রতিভাই তাঁকে জনপ্রিয় সঞ্চালক, সংবাদপাঠক হিসেবে পরিচিতি দিয়েছিল। প্রায় রোজ তাঁকে দূরদর্শনের পর্দায় দেখা যেত। এতে কি তাঁর জৌলুস কমে গিয়েছিল? মানতে রাজি নন ধৃতিমান। তিনি বলেছেন, ‘‘এটা ওর বাড়তি প্রতিভা। যার জোরেই অন্যদের থেকে দেবরাজ আলাদা। ওই সময়ে অনেকেই এ ভাবে নিজেকে অন্য মাত্রায় তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। এতে অভিনেতার জৌলুস একটুও কমে না।’’ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সময়ের সাথে পরিবর্তনের এই বর্তমান দিনে সংবাদ উপস্থাপনার ইঁদুর দৌড়ের লড়াইয়ে সমস্ত টেলিভিশন জগত দৌড় শুরু করলেও আজও বাংলা তথা বাঙালির মন জুড়ে বিরাজমান সেই সাদাকালো টেলিভিশন তথা দূরদর্শনের সংবাদ উপস্থাপক দেবরাজ ও ব্রততীর মেলবন্ধন। নিউজ বর্তমান প্রয়াত দেবরাজ রায়ের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করে।
Discussion about this post