বীরভূমের নীচুপট্টির একটি পেল্লায় দোতলা বাড়ি। কালীপুজো উপলক্ষ্যে কয়েকদিন ধরেই বাড়িটি সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। চারদিকে লোকজনের সমাগম। কিন্তু গত বছরও এখানকার ছবিটা ছিল অন্যরকম। কারণ বাড়িটি একাধারে বীরুভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলের বসতবাড়ি, অন্যদিকে বীরভূম জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ও বটে। এই বাড়িতেই বিগত কয়েক বছর ধরে ঘটা করে মা কালীর আরাধনা হয়ে আসছে। কিন্তু মাঝে ২০২২ ও ২০২৩ সালে পুজো হয়েছে নমো নমো করে। কারণ, এই সময়কালে অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট ছিলেন তিহাড় জেলে। গরু পাচার মামলায় তিনি ইডি-র হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সদ্য জামিনে মুক্ত হয়ে বীরভূমে নিজের বাড়িতে ফিরেছেন। তাই তাঁর কালীপুজোয় এবার জাঁকজমক অনেকটাই বেশি। অনুব্রত মণ্ডলের নীচুপট্টির বাড়ির কালীপুজো এলাকায় কেষ্ট-কালী নামেই পরিচিত। ২০২১ সালেও মা কালীকে অনুব্রত প্রায় ৫৭০ ভরি সোনার গহনায় সাজিয়েছিলেন। পরের দুবছর তাঁর অনুপস্থিতিতে মায়ের কপালে সেভাবে গহনা জোটেনি। কিন্তু এবার কেষ্ট ফিরেছেন নিজভূমে। তাই সকলেরই কৌতুহল, কেষ্ট-কালী কী এবার ভরি ভরি সোনার গহনায় সেজে উঠবেন? কেষ্ট কী তাঁর আরাধ্যা মা কালীকে নিজের হাতেই গহনা পড়িয়ে দেবেন আগের মতো?
গরু পাচার মামলায় তিহাড় জেলে বন্দি থাকার জন্য অনুব্রত মণ্ডল নিজের গ্রামের বাড়ির দুর্গাপুজো এবং বীরভূম নীচুপট্টির দলীয় কার্যালয়ের কালীপুজোয় অংশ নিতে পারেননি। এবার দুর্গাপুজোর আগেই জামিনে মুক্ত হয়ে বীরভূমে ফিরেছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি। এরপর দুর্গাপুজোয় গ্রামের বাড়িতে গেলেও পুজোয় সেভাবে অংশ নেননি। কিন্তু দলীয় কর্মী-সমর্থকদের আশা, কালীপুজোয় আগের মতোই অংশগ্রহন করবেন তিনি। সেই মতো বোলপুরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে জোরকদমে চলছে কালীপুজোর প্রস্তুতি। কিন্তু জামিনে মুক্ত হওয়ায় তিনি থাকবেন পুজোয়, তবে এবার হয়তো নিজের হাতে কালীপ্রতিমা সাজাতে পারবেন না অনুব্রত মণ্ডল।
সূত্রের খবর, ১৯৮৮ সাল থেকে বোলপুরের নীচুপট্টির তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়ে কালীপুজো হয়ে আসছে। তবে ২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই পুজোর জৌলুস বছর বছর বেড়েছে। অনুব্রত মণ্ডলের প্রতাপের জন্য এই পুজো কেষ্ট-কালী নামেই বিখ্যাত হয়ে যায়। জেলা এবং রাজ্য স্তরের নেতা-নেত্র্রীরা বোলপুরে ছুটে আসতেন কেষ্ট মণ্ডলের পুজোয় অংশ নিতে। শোনা যায়, প্রথম দিকে ১৮০ ভরি সোনার গয়না পরানো হত এই কালী প্রতিমাকে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে বছর বছর গয়নার পরিমান বেড়েছে। ২৬০ ভরি থেকে ৩৫০ ভরি হয়ে তা ৫০০ ভরিও পার করে যায়। ২০২১ সালে অনুব্রত মণ্ডল নিজের হাতে মাকে ৫৭০ ভরি সোনার গহনায় সাজিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালেই তিনি গরু পাচার মামলায় ইডি-র হাতে গ্রেফতার হন। পরে ঠাঁই হল তিহাড় জেলে। পাশের সঙ্গেই গ্রেফতার হয়েছিলেন একমাত্র কন্যা সুকন্যা মণ্ডলও। ফলে নীচুপট্টির দলীয় কার্যালয় কার্যত অভিবাবকহীন হয়ে পড়ে।
তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে নমো নমো করে পুজো সারেন গত দু-বছর। সূত্রের খবর, নীচুপট্টির কেষ্ট-কালীর সোনার গহনাও ইডি-র সন্দেহের তালিকায় ছিল। ফলে মাকে গত দু-বছর খুব সামান্য গহনায় সাজানো হয়েছিল। কিন্তু এবার তো অনুব্রত ও সুকন্যা মণ্ডল বাড়ি ফিরেছেন। ফলে পুজোর জৌলুসও যে বাড়বে সেটা বলে দিতে হবে না। পুজোর প্রস্তুতিও চলছে জোর কদমে। কিন্তু কেষ্ট মণ্ডল এবার নিজের হাতে মা কালীকে গহনায় সাজাতে পারছেন না। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, তাঁর এক কাকার মৃত্যুর জন্য অশৌচ চলছে। তাই মাকে সাজানোর ভার নিতে পারছেন না। কিন্তু এবার কেষ্ট-কালী কী ৫৭০ ভরি সোনার গহনায় সাজবেন? উত্তর মিলবে রাত পোহালেই।
Discussion about this post