চুক্তিটা হয়েছিল সেই আওয়ামী লিগের শেখ হাসিনার আমলেই। এবার সেই চুক্তিকেই হাতিয়ার করে বাংলাদেশের বর্তমান তদারকি সরকার নেপালের দ্বারস্থ হল। কারণ গৌতম আদানির ভারতীয় সংস্থা আদানি পাওয়ার লিমিটেড বকেয়া চেয়ে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। আর্থিকভাবে প্রায় দেউলিয়া বাংলাদেশ সরকার আদানি গ্রুপকে কিছুটা বকেয়া পরিশোধ করেছে। তবুও বকেয়ার পরিমান প্রচুর। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন আঁধার ঘোঁচাতে মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার এবার নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। জানা যাচ্ছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লিগ সরকার নেপাল থেকে ভারত হয়ে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য যে চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছিল, তড়িঘড়ি সেই চুক্তি বাস্তবায়িত করতে দ্রুত সেই চুক্তিতে সই করা হল।
বাংলাদেশী মিডিয়া সূত্রে খবর, গত বৃহস্পতিবার নেপালের রাজধানী কাটমাণ্ডুতে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সাক্ষর হয়। কাটমাণ্ডুর একটি হোটেলে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি বা এনইএ, ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভেপার নিগম লিমিটেড বা এনভিভিএন-এর সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে সই করলেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পিডিবি-র কর্তারা। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের তদারকি সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। চুক্তি অনুযায়ী নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ। এই চুক্তির আওতায় নেপাল থেকে বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর, এই সাত মাসই বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ। ইউনিট প্রতি এই বিদ্যুতের দাম পড়বে ৮ টাকার কিছুটা বেশি। প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ পড়ে ১১ টাকার বেশি। ফলে নেপাল থেকে বা ভারত থেকে এর কমেই বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। সে দেশের পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান অনুষ্ঠানে বলেন, এই চুক্তি আঞ্চলিক জ্বালানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
আসলে ভারতের আদানি পাওয়ারের থেকে বর্তমানে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না বাংলাদেশের জাতীয় পাওয়ার গ্রিড। ফলে সে দেশে প্রতিদিন বিপুল পরিমান বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। যদিও দাবি করা হচ্ছে, ডেডলাইনের আগেই আদানি গ্রুপকে ১৭৩ মিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করেছে ইউনুস সরকার। তবে এখনও বকেয়া ৮৪৩ মিলিয়ন ডলার। যা ধীরে ধীরে মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে আদানি গ্রুপকে জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে আদানিদের তরফে সরকারিভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো না হলেও, সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের তরফে জারি করা ওই ১৭৩ মিলিয়ন ডলারের লেটার অফ ক্রেডিট প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। সংস্থার বক্তব্য, এটা মূল চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই পরিস্থিতিতে প্রবল চাপে থাকা বাংলাদেশ সরকার নেপালের মুখাপেক্ষী হল। যদিও নেপাল থেকে ওই বিদ্যুৎ ভারতের এনটিপিসি-র পাওয়ার গ্রিডের মাধ্যমেই বাংলাদেশে ঢুকবে। প্রতি বছর আনুমানিক ১৩০ কোটি টাকা হিসাবে এই বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশের পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬৫০ কোটি টাকার বেশি। ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে এই বিদ্যুৎ ঢুকবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।
Discussion about this post