বই প্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ। ২৮ বছর পর কলকাতা বইমেলায় নাও থাকতে পারে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন। এমনই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এবার। কারণ অবশ্যই বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের নয়া সমীকরণ। প্রসঙ্গত, ২০২৫ সালের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার ঢাকে কাঠি পড়তে আর আড়াই মাসও বাকি নেই। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিদেশী রাষ্ট্রের প্যাভিলিয়নের ব্যাপারে যখন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে, তখন বাংলাদেশ নিয়ে তৈরি হয়েছে ঘোর অনিশ্চিয়তা।
শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই অশান্ত বাংলাদেশ। এবার সেই ‘ঝড়ে’র প্রভাব পড়তে পারে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায়। পাবলিশার্স অ্যান্ড গিল্ডের তরফে দাবি, এই বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। প্রসঙ্গত, বইমেলার আয়োজন নিয়ে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন পাবলিশার্স অ্যান্ড গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “বাংলাদেশের উদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা সরকারের মুখাপেক্ষী। তারা যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই মেনে পদক্ষেপ করা হবে”। আসলে প্রতিবছরই বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের তরফেই গিল্ডকে প্রতি বার বইমেলায় অংশগ্রহণের বিষয়ে বলা হয়। কিন্তু এ বার এখনও টুঁ শব্দ নেই। তার কারণ, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের কোনও ডেপুটি হাই কমিশনার কলকাতায় কর্তব্যরত নেই। নভেম্বর বা ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশের তরফে কলকাতা বইমেলা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয় কতগুলি পাবলিকেশন তাঁদের দেশ থেকে আসছেন। কিন্তু এবার সেই ব্যাপারে এখনও যোগাযোগ করা হয়নি। ফলে আদৌ বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
পাবলিশার্স অ্যান্ড গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রতিবছরের মতো এবারের কলকাতা বইমেলায় অংশগ্রহণ করছে গ্রেট ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পেরু, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া এবং লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলি। এবারের থিম কান্ট্রি জার্মানি। ৪৮ বছর পর জার্মানি কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় থিম কান্ট্রি হিসেবে অংশ নিতে চলেছে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে এবারের বইমেলায় সব জল্পনা বাংলাদেশকে ঘিরে। কারণ, ভারতের পড়শি দেশের ভাষা বাংলা। ফলে ওপার বাংলার সাহিত্য, কবিতা নিয়ে এ পার বাংলায় উৎসাহ কম নেই। প্রতি বছরই বাংলাদেশ প্যাভিলয়নে যেমন ভিড় থাকে, তেমনই বিক্রিবাট্টাও বেশি থাকে। কিন্তু এবার ব্যাপারটা আলাদা। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ডামাডোল চলছে। মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকারের বহু উপদেষ্টাই কারণে-অকারণে ভারতের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করছেন। ফলে বাংলাদেশে অশান্তিতে লাগাম পরানো যায়নি। উলটে সে দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার বেড়েছে বলে অভিযোগ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পালিয়ে এসে ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। ফলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাবলিসিয়ার্সরা কলকাতা বইমেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ধন্ধে রয়েছেন। তবে পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে ২৮ বছর পর হয়তো এবার কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় থাকবে না বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন।
Discussion about this post