সারদা কেলেঙ্কারিতে যখন কুণাল ঘোষ গ্রেফতার হয়েছিলেন সেই সময়ের কথা নিশ্চই আপনাদের মনে আছে? যদি ভুলেও যান, তবে হয়তো সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের এক অদ্ভুত আচরণ আপনাদের সেই বিস্মৃত অতীত মনে করিয়ে দিয়েছে। ওই যে কুনাল ঘোষকে যখন আদালতে হাজির করানো হচ্ছিলো তখন সমবেতভাবে পুলিশকর্মীদের প্রিজন ভ্যানের দেওয়াল বাজানোর মজার দৃশ্য। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ কুণাল ঘোষ করে যাচ্ছিলেন।
আর তাতে চরম অস্বস্তিতে পড়ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে এক অভিনব পন্থা আবিষ্কার করে কলকাতা পুলিশ। প্রিজন ভ্যানে একাধিক পুলিশকর্মী হাত দিয়ে চাপড় মারতে শুরু করে, নিজেরাও জোরে জোরে চিৎকার করতে শুরু করেন। যাতে কুণালের গলার আওয়াজ মিডিয়ার ক্যামেরায় ধরা না পড়ে, সেটাই ছিল পুলিশের উদ্দেশ্য। এবার আর জি কর কাণ্ডের বিচার শুরু হতেই শিয়ালদা আদালত চত্বরে সেই দৃশ্য ফের দেখা যাচ্ছে। এবার, এক ধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্তর মুখ বন্ধ করতে কলকাতা পুলিশের কর্মীদের দেখা গেল গাড়ির বনেটে জোরে জোরে চাপড় মারছেন। যা দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসাহাসি শুরু হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার অর্থাৎ ১৮ নভেম্বর। আর জি কর হাসপাতালে এক তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের মামলায় ধৃত কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। তখনই দেখা গেল সেই অভিনব দৃশ্যপট। ধৃতকে যে গাড়িতে করে আদালতে নিয়ে আসা হয়েছিল, তাতে অনবরত চাপড় মেরে চলেছেন কয়েকজন পুলিশকর্মী। এছাড়াও সেই গাড়ির চালক বিনা কারণে ক্রমাগত হর্ন বাজিয়ে চলেছেন। স্বভাবতই এই দৃশ্য দেখে আদালতের সামনে অন্যান্যদের চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায়।
কিন্তু সেখানে উপস্থিত সাংবাদকর্মীদের ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধা হল না। কারণ, বছর কয়েক আগেই সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত কুণাল ঘোষের বেলাতেও একই ঘটনা ঘটিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। আসলে আর জি কর কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয় রায় এর আগে দুবার মুখ খুলেছিলেন আদালতের বাইরে। সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনেই তিনি দাবি করেছিলেন তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। এবং কলকাতার পূর্বতন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের নাম উল্লেখ করে তাঁর অভিযোগ ছিল, তিনিই তাঁকে ফাঁসিয়েছেন। ফলে চরম অস্বস্তিতে পড়ে কলকাতা পুলিশ। এবার যাতে সঞ্জয় আর টিভি ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে না পারেন, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিল কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এটা কী কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা করতে পারেন?
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, যেহেতু সঞ্জয় এর আগে ‘ডিপার্টমেন্ট’ ও কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের বিরুদ্ধে তাকে ফাঁসানোর অভিযোগ করেছে তাই এহেন অতি সতর্কতা নিচ্ছে পুলিশ। যাতে চিৎকার করে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার কিছু বলতে চাইলেও তা শোনা না যায়। প্রসঙ্গত, এর আগে সঞ্জয় প্রিজন ভ্যানের ভিতর থেকে চিৎকার করে বলেছিল, ‘আমাকে কলকাতার প্রাক্তন সিপি বিনীত গোয়েল এবং ডিসি স্পেশ্যাল ফাঁসিয়েছেন!’ এবার যাতে সঞ্জয় সেরকম কোনও মন্তব্য করতে না পারে, তাই আগাম সতর্কতা পুলিশের। কেউ-কেউ বলতে শুরু করেছেন যে আরজি কর মামলায় ‘কুণাল অস্ত্রের’ ব্যবহার করছে পুলিশ। সারদা মামলায় কুণাল ঘোষকে যখন আদালতে আনা হত, তখন তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বিরোধী বিভিন্নরকম বিস্ফোরক মন্তব্য করতেন। সেইসময় কুণালের মুখ বন্ধ করতে গাড়ি চাপড়াতে দেখা যেত পুলিশকে। সোমবার সঞ্জয়ের ক্ষেত্রেও সেটাই হল।
Discussion about this post