সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে বারংবার হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের প্রসঙ্গে সরকার এবং পুলিশের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয়, সেখানকার সংখ্যালঘুদের ওপর ক্রমবর্ধমান অত্যাচারের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় প্রতিবাদও। ঠিক এই আবহেই এবার একটি বড় আপডেট সামনে এসেছে। এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সেদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। এবার এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁর অনুগামীরা। সোমবার বিকেল থেকে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। সেই সঙ্গে সন্ধ্যায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের কর্মীরাও ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভ থেকে চিন্ময়ের মুক্তির দাবি জানান তাঁরা। নয়াদিল্লি তথা ভারত সরকার এই ঘটনায় “গভীর উদ্বেগ” প্রকাশ করেছে। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বহুবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ, একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ন্যায্য দাবি তোলায় ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।” তাঁর গ্রেফতারির বিষয়ে ঢাকা পুলিশের মুখপাত্র তলেবুর রহমান জানিয়েছেন, কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। এই গ্রেফতারি শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে তাদের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে মহম্মদ ইউনুস প্রশাসনকে।
আট দফা দাবি গুলি হল:
১. সংখ্যালঘু নিপীড়নের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন: দ্রুত বিচার, ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।
২. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও অধিকার সুনিশ্চিত করা।
৩. সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক গঠন: সংখ্যালঘুদের বিশেষ চাহিদা এবং সমস্যা সমাধানে কাজ করা।
৪. হিন্দু ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে রূপান্তর করতে হবে: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুযোগ থাকতে হবে।
৫. দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ ও আইন প্রণয়ন: মন্দির এবং সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থান সুরক্ষিত করা এবং ‘ভেস্টেড প্রোপার্টি অ্যাক্ট’-এর অপব্যবহার বন্ধ করা।
৬. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু প্রার্থনার স্থান: সকল ছাত্রদের ধর্মীয় অনুশীলনের সুযোগ নিশ্চিত করা।
৭. সংস্কৃত ও পালি শিক্ষার আধুনিকীকরণ: সংখ্যালঘু শিক্ষার মানোন্নয়ন।
৮. দুর্গাপূজা উৎসবে বিশেষ ছুটি বৃদ্ধি: সংখ্যালঘু উৎসবের সময় সরকারি ছুটি বৃদ্ধির দাবি।
অর্থাৎ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, বাড়িঘর, মন্দির ও দোকানপাটে ভাঙচুর, দেশত্যাগের হুমকির বিচারসহ আট দফা বাস্তবায়নের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ। জাগরণ জোট জানিয়েছে, দাবিগুলি বাস্তবায়নে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। ভারতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলিও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
Discussion about this post