গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বাংলাদেশে এই অচলাবস্থার মধ্যেই শক্তি বাড়াচ্ছে একাধিক জঙ্গি সংগঠন। ভারতেও সক্রিয় হয়ে উঠতে চাইছে তারা। আর সেই কারণেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতন চলছে। যাতে যাবতীয় নজর সেই দিকে সীমাবদ্ধ থাকে ভারত সরকারের। সেই সুযোগে বাংলাদেশে সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি নিজেদের সংগঠন আরও মজবুত করে তুলতে পারে। এমনটাই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, বাংলাদেশে এই গণ আন্দোলন ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত বলা হলেও আসলে এর নেপথ্যে কাজ করেছে একাধিক জঙ্গি সংগঠন। বিশেষ করে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলার ক্ষেত্রে এই জঙ্গি সংগঠনগুলোর হাত রয়েছে। গোটা পরিকল্পনা পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থার। যেহেতু ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী জম্মু কাশ্মীর, লাদাখ, রাজস্থান ও গুজরাটে কড়া নজরদারি ও অভিযান চালাচ্ছে, সেহেতু পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলি ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ করাতে পারছে না। শেখ হাসিনার পতন তাঁদের কাছে সোনায় সোহাগা হয়েছে। বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষমতা পেলেও, তিনি কার্যত ছাত্র নেতাদের হাতের পুতুল। আর সেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতৃত্বকে পিছন থেকে পরিচালনা করছে বাংলাদেশের কট্টরপন্থী মৌলবাদী সংগঠনগুলি। যারা খুব সূচতুরভাবে বাংলাদেশের নবীন প্রজন্মের মধ্যে ভারত বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়েছে। জামাতের আমির, হুজুররা এই কাজ এখনও করে চলেছে। অপরদিকে ক্ষমতায় এসেই মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের জেলে বন্দি বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক জঙ্গিকে মুক্তি দিয়েছে। আবার অনেকে জুন-জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় জেল ভেঙেও পালিয়েছিল। যাদের বর্তমানে প্রকাশ্যে দেখা গেলেও জেলবন্দি করার কোনও প্রচেষ্টা নেই ইউনূস প্রশাসনের।
আসলে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে কোনও নির্বাচিত সরকার নেই। যারা আছেন তাঁরা কার্যত উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। আর তাঁদের মসনদে বসতে সাহায্য করেছেন মুসলিম কট্টরপন্থী সংগঠনগুলিই। এই মুহুর্তে বাংলাদেশ জঙ্গিদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে। জানা যাচ্ছে, হাসিনা জমানায় একাধিক কট্টরপন্থী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। যা ইউনূস প্রশাসন একে একে তুলে নিচ্ছে। ফলে সেই সংগঠনগুলি এখন প্রকাশ্যেই সভা সমাবেশ করছেন। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, শেখ হাসিনা জমানায় জেএমবি , হুজি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ বা জেএমজেবি-সহ একাধিক জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বছরখানেকের চেষ্টায় ওইসব সংগঠনের প্রায় ১৮১৪ জনকে গ্রেফতার করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূসের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সংগঠনগুলির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে। আরও দুটি সংগঠনের নাম উঠে আসছে ইউনূস জমানায়।
তা হল শাহদত-ই-আল-হিকমা এবং হুজবুত তেহরি। অক্টোবর মাসেই এই দুটি সংগঠনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলা হয়েছে। এরপর তাঁরা বাংলাদেশের সংসদের সমানে এবং ঢাকার মানিকমিয়া এভিনিউতে সংগঠনের ব্যানার হাতে মানববন্ধনে অংশ নেয়। এমনকি খিলাফত স্লোগানে কমলা রঙের ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে সংসদ ভবনের সামনে হাজির ছিলেন হিজবুত নেতারা। আরও জানা যাচ্ছে ইউনূস প্রশাসন ইতিমধ্যেই জইশের ১২ জন, লস্কর ই তৈবার ৪ জন, হিজবুত তাওহিদের ১৫ জন, আনসারুল বাংলা টিমের ১৮ জন, আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্সের ৪ জন, আল হিকমার ১২ জন, জেএমবির ২৮ জন, হুজির ২২ জনকে জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছে। তবে এই বিষয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তরফে সরকারিভাবে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। আবার সরকারের তরফে এই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। ফলে পুরোটাই হয়েছে গোপনে। যাতে ভারত বা আমেরিকার মতো দেশ এই বিষয়ে ইউনূস সরকারকে কাঠগোড়ায় তুলতে না পারে।
এবার ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি অনুমান করছে, বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলি ভারতে নাশকতার চেষ্টা করতে পারে। তাঁদের মূল টার্গেট, ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি, মূলত মণিপুর আর অসম। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়ঘণ্ড ও দিল্লিও টার্গেট হতে পারে। অপরদিকে, ব্রিটেন সরকারও সম্প্রতি একই আশঙ্কা করে ব্রিটিশ নাগরিকদের বাংলাদেশে যেতে নিষেধ করেছে। ব্রিটেন সরকার এই বিষয়ে স্পষ্ট অ্যাডভাইসরি জারি করেছে। যা প্রমান করে শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশের জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত ব্রিটেনও।
Discussion about this post