২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ট্রাকবোঝাই অস্ত্র পাচারের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড মকুব হল বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর-সহ ছ’জনের। ২০ বছর পর বুধবার ছাড়া পেয়েছেন ছয় অভিযুক্ত। তবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে সপ্তম অভিযুক্ত তথা ভারতের সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন আলফা-র প্রধান পরেশ বড়ুয়ার। আলফার কুখ্যাত জঙ্গি নেতা পরেশ বড়ুয়ার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল ইউনুস সরকার শাসিত বাংলাদেশের কোর্ট। এই মামলায় খালেদা জিয়া সরকারের আমলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী থাকা লুৎফুজ্জামান বাবরকেও সাজামুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে খালেদা সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিএনপি নেতা বাবর এখনই জেল থেকে মুক্ত হচ্ছেন না। কারণ অন্য এক মামলায় তাঁর দণ্ড রয়েছে। মামলায় মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন এমন ৬ আসামির সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়েছে। মামলায় মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে বাংলাদেশের কোর্ট এই রায় দেয়। এর আগে, এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে প্রাক্তন মন্ত্রী ও জামায়েতের মতিউর রহমান নিজামি, লুৎফুজ্জামান বাবর, আলফার পরেশ বড়ুয়া, বাংলাদেশের দুই গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সহ ১৪ জনের ফাঁসির আদেশ হয়। আসামিদের ডেথ রেফারেন্স বাংলাদেশ হাইকোর্টে যায়, সাজাপ্রাপ্ত ১২ জন আলাদা আপিল করেন। বুধবার বাংলাদেশের হাই কোর্টে ওই মামলায় শুনানির পর রায় দিয়েছে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের বেঞ্চ। অভিযুক্ত ১৪ জনের মধ্যে বাবরের পাশাপাশি ছ’জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ছ’জন আসামির সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তবে সাজা মকুব হয়নি আলফার-র সামরিক কমান্ডার পরেশের। ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে তাঁর। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে ১০টি ট্রাকবোঝাই অস্ত্র আটক করা হয়। বাজেয়াপ্ত হয় ৪,৯৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৭,০২০টি গ্রেনেড, ৮৪০টি রকেট লঞ্চার, ৩০০টি রকেট, প্রায় ১০ লক্ষ বুলেট-সহ আরও বহু অস্ত্র। ওই ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে দু’টি মামলা হয়। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নাম জড়ায় ১৪ জনের। অভিযুক্তদের মধ্যে বাবর ছাড়াও ছিলেন প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াত-এ-ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং দু’টি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাও। বাবর ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন বাবরেরা। ১৪ জনেরই মৃত্যুদণ্ড হয়। ওই মামলাতেই বুধবার অপরাধীদের সাজা কমাল হাইকোর্ট। বাবর ছাড়াও যাঁরা এদিন মুক্তি পেয়েছেন, তাঁরা হলেন, সিইউএফএলের তৎকালীন মহাপরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, তৎকালীন প্রশাসনের কেএম এনামুল হক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহিপরিদফতরের প্রাক্তন পরিচালক মেজর জেনারেল মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল চৌধুরী। এঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ না থাকায় তাঁরা মুক্তি পেয়েছেন।
Discussion about this post